নিখোঁজ ইয়াসিন মিয়া মদন উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের রূপচান মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালক। গত শনিবার (৮ মার্চ) খালিয়াজুরির রসুলপুর ঘাটে যাত্রী নিয়ে গিয়েছিল ইয়াসিন। সেখানে স্থানীয় ও মাছ শিকারীদের সংঘর্ষে তিনি নিখোঁজ হন।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) বিকেলে নিখোঁজ ইয়াসিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা সুলতানা আক্তার ঘরের সামনে বসে কাঁদছেন। তিনি বলেন, আমার ছেলেটা নিখোঁজ হইছে সাত দিন হইয়া গেছে। এখনো কোনো খোঁজ পাইতাছি না। ছেলেডারে খোঁজতে থানা-পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে ঘুরতাছি। কিন্তু কেউ কিছুই করতাছে না। আমি আমার ছেলেরে চাই। জীবিত অথবা মৃত যেভাবেই আছে তোমরা কেউ আমার বাজানরে আইন্না দেও।
স্থানীয় বাসিন্দা ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে মাছশিকারিরা সংঘবদ্ধ হয়ে খালিয়াজুরির বিভিন্ন জলমহালে পলো দিয়ে মাছ শিকার করছিলেন। সরকারের কাছ থেকে ইজরা নেওয়া উপজেলার অন্তত সাতটি জলমহালে এসব মাছশিকারিরা মাছ লুটে নেন। গত শনিবার সকালে সহস্রাধিক মাছ শিকারি পলো নিয়ে একটি জলমহালের মাছশিকার করতে যান। এ সময় ধনু নদের রসুলপুর ঘাটে তারা ইজিবাইক, সিএনজি, পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহন রেখে ফেরি দিয়ে নদ পার হতে চান। এতে রসুলপুর গ্রামের লোকজন তাদের বাধা দেন। এর জেরে মাছশিকারিদের সঙ্গে রসুলপুর ও জগন্নাথপুর গ্রামের লোকজনের সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের শতাধিক লোক আহত হন। এ ছাড়া যানবাহন ভাঙচুরসহ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় চার ব্যক্তি নিখোঁজ হন। দু’দিন গত সোমবার নদ থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা হলেন— মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান গ্রামের রোকন মিয়া (৪৮), আটপাড়া উপজেলার রূপচন্দ্রপুর গ্রামের শহিদ মিয়া (৫০) ও কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি গ্রামের হৃদয় মিয়া (২৮)। তবে নিখোঁজ হওয়া ইয়াসিনের সন্ধান এখনো মেলেনি।
ইয়াসিনের মামা জুলহাস মিয়া বলেন, ওইদিন ইয়াসিন তার অটোরিকশায় করে যাত্রী নিয়ে রসুলপুর ঘাটে গিয়েছিল। এক সপ্তাহ পার হলে গেলেও তার কোনো সন্ধান মেলেনি। সে জীবিত না মৃত সেই খবরও জানি না। প্রতিদিন থানায় যাই, কিন্তু পুলিশও কোনো খবর দিতে পারছে না।
এ ব্যাপারে মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাঈম মোহাম্মদ নাহিদ হাসান বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় ইয়াসিন নামের একজন নিখোঁজ রয়েছেন। ঘটনায় মদন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
খালিয়াজুরী থানার ওসি মো. মকবুল হোসেন বলেন, সংঘর্ষের পর তিন জনের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর নিখোঁজ হওয়া ইয়াসিনের সন্ধানে পুলিশ কাজ করছে।