ভারতফেরত বাংলাদেশিদের নিয়ে বিপাকে যশোরের স্বাস্থ্য বিভাগ। দেশের সীমান্ত বন্ধের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না দেশের বৃহত্তম স্থল বন্দর বেনাপোলে। সকল নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে প্রতিদিনই বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে দেদারসে চলাচল করছে পাসপোর্ট যাত্রীর পাশাপাশি পণ্য আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে কাজ করা শত শত মানুষ। মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধিও। লোক চলাচল অব্যহত থাকায় করোনার ভারত ভ্যারিয়েন্ট দেশময় ছড়িয়ে পড়ার যে আশঙ্কা তা আরো তীব্র হচ্ছে। একইসঙ্গে আতঙ্ক বিরাজ করছে বেনাপোল পোর্ট ও ইমিগ্রেশনে কর্মরতদের মধ্যে। ইতিমধ্যে বেনাপোলের ওপারে পেট্রাপোল, বনগাঁ, বিধাননগরসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে করোনা মহামারি আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল।
এই অবস্থায় বেনাপোল স্থল বন্দরসহ এই অঞ্চলের সীমান্ত পথে বৈধ-অবৈধভাবে চলাচলকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশের পরিস্থিতি যেকোনো মুহূর্তে নাজুক হতে পারে- এমন আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। ভারত-বাংলাদেশে আটকেপড়া পাসপোর্টধারী যাত্রীরা স্ব-স্ব দেশে অবস্থিত হাইকমিশনের বিশেষ অনুমতিপত্র পেয়ে যার যার দেশে ঢুকতে পারছেন বেনাপোল হয়ে।
ইমিগ্রেশন ওসি আহসান হাবিব জানান, সোমবার সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভারতে আটকেপড়া ১২৩৯ বাংলাদেশি বেনাপোল স্থলপথে দেশে ফিরেছেন। বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফিরেছেন ৯৭ যাত্রী। তবে, আগত বাংলাদেশিদের মধ্যে ৫ জন করোনা পজেটিভ রয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৫২৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। হাইকমিশনের অনুমতিপত্র ছাড়াও তাদের সঙ্গে করোনা নেগেটিভ সনদ আনতে হয়েছে। তবে, যারা এসেছেন তাদের নিজ খরচে বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকায়ই থাকতে হবে। নতুন করে যাত্রীদের ভারত ও বাংলাদেশ ভ্রমণ এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, গতকাল যেসব বাংলাদেশি নাগরিক ফেরত এসেছেন তাদের মধ্যে মেডিকেল পরীক্ষায় তিনজন করোনা পজেটিভ হয়েছেন। তাদের বিশেষ ব্যবস্থায় যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের রেড জোনে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিশেষ অনুমতিপত্র নিয়ে যারা ভারত থেকে দেশে ফিরে আসছেন, তাদের বন্দর এলাকার বেশ কয়টি আবাসিক হোটেলে রাখা হচ্ছে। পোর্ট ভিউ, রজনীগন্ধা, জুয়েল হোটেল, সিটি আবাসিক, চৌধুরী হোটেল, হোটেল অ্যারিস্টোক্রেট, সানসিটিসহ আরো বেশ কয়েকটি হোটেলে তাদের রাখা হচ্ছে। এমনকি পৌর কমিউনিটি সেন্টার, বিয়ে বাড়িসহ বেশকিছু স্কুলেও রাখা হচ্ছে ভারত ফেরত যাত্রীদের।
স্থান সংকুলান না হওয়াতে বাস ও মাইক্রোবাস এবং এম্বুলেন্সে লাউজানি এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোয়ারেন্টিনে রাখা আগতদের পাসপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রাখা হচ্ছে। কোয়ারেন্টিন শেষে তাদের পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হবে। কোয়ারেন্টিনে তাদের দেখভাল ও নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তাকর্মীও নিয়োজিত রয়েছে। গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার মিলে ৯ শতাধিক ভারতফেরত যাত্রীকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশে আটকেপড়া অনেক ভারতীয় নাগরিক অনুরূপ পদ্ধতিতে নিজ দেশে ফেরত যাচ্ছেন। চিকিৎসা শেষে হাতে খরচের টাকা না থাকায় ভারতফেরত বাংলাদেশিরা নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে অসহায় দিন পার করছেন। তবে সরকারি নির্দেশনা মানতে তাদের বাধ্য হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার আশরাফুজ্জামান বলেন, ভারতফেরত বাংলাদেশিরা বেনাপোল বন্দর এলাকার সাতটি আবাসিক হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন। সেখানে সব খরচ যাত্রীদের বহন করতে হবে। এছাড়া ফেরত আসা ৫ বাংলাদেশি করোনা পজেটিভ যাত্রীকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের রেডজোনে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত যশোর জোনপোল হাসপাতালে ভারত ফেরত ১৫ বাংলাদেশি করোনা রোগীকে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে ভর্তিকৃত ১০ ভারতফেরত করোনা রোগী জেনারেল হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। ২ দিন পর তাদের ৭ জনকে ধরে এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও একদিন পর ফের ২ জন পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এর ফলে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট যশোরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার যে আশঙ্কা তা আরো তীব্র হচ্ছে।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি আহসান হাবিব বলেন, বাংলাদেশি উপ-হাইকমিশনের ছাড়পত্র থাকায় আটকেপড়া যাত্রীদের ১২৩৯ জন ভারত থেকে ফিরেছেন। ভারতীয় নাগরিক ফিরেছেন ৯৭ জন। তবে, নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বাংলাদেশি কোনো যাত্রী নতুন করে ভারতে যাননি এবং ভারত থেকেও কোনো ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে আসেননি। শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসনা শারমিন মিথি ফেরত আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টিন সার্বিক কাজের দেখভাল করছেন।