কুমিল্লার দেবিদ্বারের পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে সংবাদ সম্মেলনে আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী দুই মেয়রপ্রার্থী। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাদের দুজনকে আগেই দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়।
শনিবার (১৫ জুলাই) পৃথক সংবাদ সম্মেলনে পৌরসভা নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থী আবুল কাশেম ও এম এ কাইয়ুম ভূঁইয়া বিষ খেয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন।
মেয়রপ্রার্থী আবুল কাশেম বলেন, প্রতীক পাওয়ার পর থেকে নৌকার প্রার্থী সাইফুল ইসলাম শামীম নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন নীরব। আমি ঢাকায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে দুই দিন আগে দেবিদ্বার থানা ওসিসহ পুলিশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কমল কৃষ্ণ ধরকে প্রত্যাহার করা আবশ্যক। অন্যথায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, দেবিদ্বারের স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল সরকারদলীয় প্রার্থী সাইফুল ইসলাম শামীমকে জেতানোর জন্য পৌরসভার কাছাকাছি তার গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। পৌরসভার বাইরের সারা দেবিদ্বারের তার সকল নেতাকর্মী ও গুন্ডা মাস্তানকে ডেকে নিয়ে তিনি দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। তারা ভোটের দিন ১৪টি কেন্দ্রে অবস্থান করে আমার একনিষ্ঠ ভোটারদের হুমকি দেবেন, যাতে তারা ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে না আসেন। এমন হলে ভোট মোটেও অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ হবে না।
রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন সরকার দলীয় প্রার্থী সাইফুল ইসলাম শামীমের খুবই ঘনিষ্ঠ (বন্ধু)। সে কারণে শামীমের ঘনিষ্ঠদের প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন আপন ভাই। তারা দুজন মিলে শামীমকে পাস করানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারে বলে গোপনসূত্রে খবর পেয়েছি।
এদিকে অপর এক সংবাদ সম্মেলনে আরেক মেয়র প্রার্থী এম এ কাইয়ুম ভূঁইয়া বলেন, এমপি নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য দেবিদ্বারের সকল নির্বাচনকে প্রশ্ন বিদ্ধ করেছেন। নির্বাচন এখন এমপির কারণে আর অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে না। পৌর নির্বাচনও তাই এমপির কারণে সুষ্ঠু না হওয়ার আশঙ্কা করছি। এই এমপি দেবিদ্বারে নৌকা ও আওয়ামী লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। দেবিদ্বারে আওয়ামী লীগের একমাত্র ক্ষতি করেছেন তিনি। নির্বাচনে যদি উনি এভাবে হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখেন। যদি আমার ভোটারদের ভোট দিতে না দেওয়া হয় তাহলে আমি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করব।
এসব অভিযোগের বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমি এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই।
এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুল বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে, যা আদৌ সত্য নয়। আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখুন এমন কিছু হয়েছে কি না।
এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেবিদ্বারে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা প্রার্থীদের তোলা অভিযোগগুলো অবশ্যই খতিয়ে দেখব। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা যা করার সব করা হবে।