নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য ব্যবস্থাপনায় টেকসই রূপান্তরের লক্ষ্যে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ১০টি সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকারের দাবী জানিয়ে বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদ ঢাকায় এক সংসদীয় আলোচনা সভা আয়োজন করেছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তন, সেগুন বাগিচায় ২৩ নভেম্বর, বুধবার, সকাল ১০টায় এই সংসদীয় আলোচনায় দেশের বিভিন্ন সংসদীয় আসনের পক্ষে প্রায় ১০০ জন যুব ছায়া সংসদ সদস্যবৃন্দ অংশ নেন।
অধিবেশনে যুব ছায়া সংসদের সরকার ও বিরোধিদলীয় ২২ জন সদস্য উত্থাপিত বিষয়ের উপর আলোচনা করেন।
ঢাকা -৬ আসনের যুব ছায়া সংসদ সদস্য মহসিনা আক্তার বন্যা প্রস্তাব (সাধারণ) ১৪৭ বিধিতে বক্তব্য উপস্থাপন করে বলেন, “বর্তমান বাংলাদেশে খাদ্য অনিরাপদতা, অপুষ্টি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধিসহ মৌলিক অধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। কোভিড-১৯ পরবর্তি অভিঘাত, বৈশ্বিক সংঘাতময় পরিস্থিতি ও জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে খাদ্য উৎপাদন সঙ্কট এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার বাস্তবতায় সরকারসহ দেশের সর্বস্তরের সকলকে ন্যুনপক্ষে ১০টি অঙ্গীকার করতেহবে।”
যুব ছায়া সংসদের যে অঙ্গীকারের দাবী জানাচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে (১) সকলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার সহজ প্রাপ্যকরণে ভূমিকা রাখা, (২) ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের প্রয়োগ কমিয়ে মাটির স্বাস্থ্য ও স্থায়িত্বশীল কৃষি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা; (৩) স্কুল, কলেজ ও অন্যন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিশুদের স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করণে সহায়তা করা; (৪) আমাদের পৃথিবী সবুজ ও বাসযোগ্য রাখতে ফুড সিষ্টেম ও এর প্রভাব সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা; (৫) বনভূমি নিধন ও রূপান্তর বন্ধ করে কৃষি জমি পুনরুদ্ধার করা; (৬) খাদ্য ও পানীয় সামগ্রী বাজারজাত ও প্যাকেট জাতকরণের কেবলমাত্র একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাষ্টিক নিষিদ্ধ করা; (৭) স্থানীয় ও প্রচলিতজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা, মানা ও প্রচার করা; (৮) তরুণ কৃষক এবং কৃষি-উদ্যোক্তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা; (৯) রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা, সংঘাত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে খাদ্য উৎপাদনকে রক্ষা করা; (১০) স্থানীয় কৃষক ও খাদ্য উৎপাদন কারীদেরকে ভর্তুকি ও ট্যাক্স মওকুফ প্রাপ্তিতে সহায়তা করা।
যুব ছায়া সংসদ সদস্যদের মতে, খাদ্য ব্যবস্থার মৌলিক রূপান্তরের মাধ্যমে সকলের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।
এটা দুঃখজনক যে, বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী বয়সে তরুণ-যুবা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তারা অন্তর্ভুক্ত নয়। যদিও বাস্তবতা এটাই যে, বর্তমানে গৃহীত সিদ্ধান্তের পরিণতি তরুণদেরই মোকাবেলা করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। তাই প্রয়োজন, যুব-তরুণদের প্রস্তাবগুলি শোনা এবং তাদের সাথে নিয়ে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
যুব ছায়া সংসদের সংসদীয় আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ, বাসস চেয়ারম্যান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রদূত মস্য়ূদ মান্নান, সাবেক কৃষি সচিব আনোয়ার ফারুক, কৃষি বিজ্ঞানী ডঃ মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, ইউসিবি ব্যাংকের ডিএমডি এটিএম তাহমিদুজ্জামান এবং ডিবিসিনিউজ এডিটর প্রণব সাহা।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন বাস্তব-এর নির্বাহী পরিচালক রুহি দাস, হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড এর কর্মকর্তা সৈয়দা ইয়াসমিন, ফুড সেফটি মুভমেন্ট-এর সদস্য মো: হেলালউদ্দিন, যুব সংগঠক রাইসুল মিল্লাত সাফকাত, মেহেদী হাসান বাপ্পী প্রমুখ।
স্বেচ্ছা ব্রতী যুব সংগঠন ইয়ূথ এগেইনস্ট হাঙ্গার, বিকশিত বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ইমপ্রুভমেন্ট নিউট্রিশন (গেইন), বাস্তব, বিসেফ ফাউন্ডেশন, গ্রীণ ভয়েস, ফুড সেফটি মুভমেন্ট, বাফনা, সময়ের দাবী প্রমুখ সংগঠনের সম্মিলিত প্রয়াসে বাংলাদেশ যুব ছায়া সংসদ-এর সংসদীয় আলোচনা অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন হয়েছে।
আলোচনা সভা শেষে উত্থাপিত ১০টি অঙ্গীকার নিয়ে সারাদেশে গণসংযোগ এবং প্রচারাভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মানুষকে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
অনুষ্ঠানের অতিথিমন্ডলী প্রত্যেকেই ১০টি অঙ্গীকার সম্বলিতপত্রে স্বাক্ষর প্রদান করেন।