আট মাসেরও বেশি সময় ধরে চলমান যুদ্ধের সময় গাজা উপত্যকার অন্যান্য অংশ থেকে পালিয়ে আসা দশ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির শেষ আশ্রয়স্থল ছিল রাফাহ শহর। হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করতে রাফাহতে অভিযান চালানোর বিকল্প নেই বলে জানায় ইসরায়েল। সেখানে হামলা চালালে ব্যাপক প্রাণহানি হতে পারে এমন আশঙ্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ হামলা থেকে বিরত থাকতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানায়। তাদের এমন আহ্বানকে তোয়াক্কা না করে রাফায় হামলা শুরু করে দখলদার দেশটি। সেখানে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাদের তীব্র লড়াই হচ্ছে। ফলে প্রাণভয়ে সেখানে থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন আশ্রয় নেওয়া ফিলিস্তিনিরা। কিন্তু কোথাও মিলছে না নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
আট মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এবার সেখানকার সবশেষ নিরাপদ আশ্রয়স্থল রাফাহ সীমান্ত, যেখানে ইসরায়েল সরকারই ছুটে যেতে বাধ্য করেছিল লাখো ফিলিস্তিনিকে, সেখানেই স্থল অভিযান চালাচ্ছে তেল আবিব। সরে যেতে বলেছে সব সেখানে আশ্রয় নেওয়া সব বেসামরিক মানুষজনকে। এতে চরম বিপদে গাজাবাসী।
রাফার এক বাসিন্দা বলেন, আমরা প্রতিদিনই নিরাপত্তার খোঁজে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাচ্ছি। এভাবে কতদিন ভাগ্য আমাদের সহায় হবে আর আমরা প্রাণে বেঁচে থাকবো কে জানে!
শুধু রাফাহ সীমান্ত নয়, উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবির ঘিরেও হামলা অব্যাহত থাকায় সেখান থেকেও দলে দলে ফিলিস্তিনি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়ে পথে পথে ঘুরছে। কেউ হাঁটছে নিরুদ্দেশ আর কারও কারও কপালে জুটেছে ঠেলাগাড়ি।
এক নারী বলেন, হামলার সময় আমরা একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলাম। বোমার আঘাতে স্কুলভবনটির ছাদ আমাদের মাথার ওপর ধসে পড়ে। শুধু তাই নয়, তাঁবু আশ্রয় নেওয়া অনেক মানুষ মারা যায়। তাহলে কোন জায়গাকে নিরাপদ বলব?
জাবালিয়া আর রাফাহ থেকে সরে এসে অনেকেই এখন তাঁবু গাড়ছে দেইর আল বালাহয়। সেখানেও নেই নিশ্চিন্ত হওয়ার সুযোগ।
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সন্তানদের নিয়ে পথে পথে ঘুরতে থাকা আরেক নারী জানান, আমাদের পরিস্থিতি এতোই খারাপ যা বলে বোঝানো সম্ভব না। যাওয়ার থাকার কোন জায়গাই নেই বেশিরভাগ গাজাবাসীর।
গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আন্তঃসীমান্ত আক্রমণের পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় টানা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। হামলার পাশাপাশি তেল আবিব গাজা উপত্যকায় অবরোধ আরোপ করেছে, ভূখণ্ডের জনসংখ্যা, বিশেষ করে উত্তর গাজার বাসিন্দাদের অনাহারের দ্বারপ্রান্তে ফেলেছে।
ইসরায়েলি যুদ্ধের আট মাসে গাজার বিস্তীর্ণ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধের ফলে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ বাসিন্দাই অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছেন।