ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাত বন্ধের আহ্বান সংবলিত ঘোষণা দেওয়ার লক্ষ্যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তৃতীয় বৈঠকও ব্যর্থ হয়েছে। তবে সত্বর এই সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এর আগে রুদ্ধদ্বার দুটি বৈঠকও ব্যর্থ হয়। পরে তৃতীয় দফায় গতকাল রোববার উম্মুক্ত বৈঠক আহ্বান করা হয়। এতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি দলও অংশ নেয়। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে এসব তথ্য দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে যুদ্ধ-সংঘাত বিরতির আহ্বানের আশায় বৈঠকে বসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে মানুষকে জীবিত ও মৃত উদ্ধারে ইসরায়েলের সঙ্গে সাময়িক অনুমতির চুক্তিতেও পৌঁছাতে পারেনি নিরাপত্তা পরিষদ।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দিকে যেতে সব পক্ষকে নিয়ে কাজ করছে জাতিসংঘ। মধ্যস্থতা কার্যক্রমকে তরান্বিত ও সফল করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’চলমান সংঘাতকে ‘চরম ভয়াবহ’ বলে বর্ণনা করেন জাতিসংঘের মহাসচিব। আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘এই সহিংসতা শুধু অধিকৃত ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলই নয়, পুরো অঞ্চলটিকে একটি নিয়ন্ত্রণহীন নিরাপত্তা ও মানবিক সংকটে নিমজ্জিত করতে পারে। আরও চরমপন্থা উৎসাহিত করতে পারে।’
বৈঠকে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি বলেন, “গাজায় ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ করছে ইসরায়েল। অনেকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বা ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ শব্দ দুটো ব্যবহার করতে চাইছেন না, তবে তাঁরা জানেন যে এখানে এটা ঘটছে।”জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাড এরডান হামাসের রকেট হামলাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত’ বলে আখ্যা দেন। ক্ষমতা ধরে রাখতে হামাস এই হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতের।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়া কার্যক্রমে জাতিসংঘের সহ-সমন্বয়ক টর ওয়েনেসল্যান্ড বলেন, ‘গাজায় বিদ্যুতের ঘাটতির ফলে লাখ লাখ মানুষ খাবার পানি ও পয়নিষ্কাশন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। বিদ্যুতের ঘাটতি গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে। চলমান সংঘাতের ফলে গুরুতর আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালগুলোকে।’গাজায় ইসরায়েল চারটি হাসপাতালসহ ৪০টি স্কুল এবং ১৮টি ভবন গুড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এ পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় অন্তত ১৮৮ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৫৫টি শিশু এবং ৩৩ জন নারী রয়েছে। এ ছাড়া মোট এক হাজার ২৩০ জন আহত হয়েছে। সম্প্রতি ইসরায়েল ফিলিস্তিনের জেরুসালেমে আল জাররাহ এলাকা দখলে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। এ নিয়ে সেখানকার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের মধ্যে থেমে থেমে উত্তেজনা চলে আসছিল। গত ৭ মে পবিত্র মাহে রমজানের শেষ জুমা অর্থাৎ জুমাতুল বিদা আদায় করতে বিপুল মুসল্লি আল-আকসা মসজিদে সমবেত হলে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ওপর চড়াও হয়। মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ইসরায়েলি বাহিনী। এর দুদিন পর শবে কদরেও আল-আকাসা মসজিদে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে মুসল্লিদের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে গাজা সীমান্তে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে গত সোমবার (১০ মে) থেকে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।