সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে নানা নাটকিয়তায় ১০ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিলেন অভিনেত্রী মৌসুমী ও অভিনেতা আলী রাজ। মিশা-জায়েদ প্যানেলের এ দুই প্রার্থী কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রোববার (২৭ নভেম্বর) রাতে এফডিসির চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অফিসে শপথবাক্য পাঠ করান সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। এসময় সাধারণ সম্পাদক অভিনেত্রী নিপুণ আক্তারসহ উপস্থিত ছিলেন মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডিপজল ও রুবেল। জানা গেছে, রোববার সমিতির কার্যকরী কমিটির সভা হয়। সভায় নেতৃত্ব দেন সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন এবং সাধারণ সম্পাদক নিপুণ। এ সভায় অংশ নেওয়ার জন্য মিশা-জায়েদ খানের প্যানেল থেকে বিজয়ীদের চিঠি দেওয়া হয়। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সভায় অংশ নেন সহ-সভাপতি ডিপজল ও রুবেল। তারা জানান, আলাদত যেহেতু ক’দিন আগে রায় দিয়েছে, তাই তারা নিপুণকে অফিশিয়ালি বরণ করেছেন।
শিল্পী সমিতির সভায় দুই প্যানেল থেকে নির্বাচিত প্রত্যেক সদস্যই নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে এক হয়েছিলেন। উপস্থিত ছিলেন নির্বাচিত কমিটির রিয়াজ, সাইমন, ইমন, জয় চৌধুরী, অঞ্জনা, কেয়া, জাদু আজাদ, আরমান, জেসমিন, নাদির খান ও শাহনূরসহ অনেকেই। এ তথ্য নিশ্চিত করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা সাইমন সাদিক বলেন, রাতে আমাদের সাধারণ সভার মিটিং ছিল। সেই মিটিংয়ের আগে মৌসুমী আপু ও আলী রাজ ভাই কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এই শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। তার পাশে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক নিপুণ আক্তার । এই সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচিত প্রায় সবাই।
শিল্পী সমিতির সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক ইমন আরও বলেন, মৌসুমী আপা আজ শপথ নিয়েছেন। পাশাপাশি ডিপজল ভাই, রুবেল ভাইসহ নির্বাচিত প্রত্যেকেই শিল্পী সমিতিতে এসেছিলেন। তারা নিপুণকে বরণ করে নিয়েছেন। আমাদের মধ্যে এখন আর কোনো বিভেদ নেই।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা শহিদুল হারুন এফডিসিতে ফলাফল ঘোষণা করেন। তাতে গত দুই মেয়াদে শিল্পী সমিতির সভাপতি থাকা মিশা সওদাগরকে ৪৩ ভোটে হারিয়ে সভাপতি হন ইলিয়াস কাঞ্চন। আর সাধারণ সম্পাদক পদে হ্যাটট্রিক করা জায়েদ খানের কাছে ১৩ ভোটে হারেন ইলিয়াস কাঞ্চনের প্যানেলের প্রার্থী নিপুণ আক্তার।
তবে অর্থ দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ এনে নির্বাচনী আপিল বোর্ডে জায়েদ খান ও কার্যকরী পরিষদের সদস্য চুন্নুর পদ বাতিলের আবেদন করেন নিপুণ। সে আবেদনে বিষয়ে নির্বাচনী আপিল বোর্ডকে সিদ্ধান্ত নিতে সমাজসেবা অধিদপ্তর চিঠি দেয়। এরপর জায়েদ খান ও চুন্নুর বিষয়ে বৈঠকে বসে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনী আপিল বোর্ড। বৈঠকে শেষে বোর্ডের প্রধান ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল বলে সাধারণ সম্পাদক পদে নিপুণকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করেন।
তবে নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা এবং নিজের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। সে রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনী আপিল বোর্ড কর্তৃক জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। সেই সঙ্গে জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে বিজয়ী ঘোষণার বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করা হয়। এছাড়া নিপুণের অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচনী আপিল বোর্ডকে সিদ্ধান্ত নিতে সমাজসেবা অধিদফতরের চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়।
পরবর্তীতে হাইকোর্টের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে নিপুণ। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে বিষয়টি প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। সে পর্যন্ত চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে দুজনের কেউই দায়িত্ব পালন করতে পারবে না মর্মে (স্ট্যাটাসকো) আদেশ দেওয়া হয়।
এরপর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এবিষয়ে শুনানি নিয়ে হাইকোর্টকেই তাদের জারি করা রুলটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া হাইকোর্টে রুল নিস্পত্তির আগ পর্যন্ত চেম্বার আদালতের দেয়া আদেশই বহাল থাকবে বলে নির্দেশ দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
এরপর হাইকোর্ট রুল শুনানি শেষে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান বৈধ বলে রায় দেন। কিন্তু হাইকোর্টের সে রায়ের বিরুদ্ধে নিপুণ আক্তারের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় চার সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন।
এরপর ২১ নভেম্বর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিপুণকে আপিলের অনুমতি দেন সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।