আন্তর্জাতিক বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন উত্তর কোরিয়া নিজের পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের ভাণ্ডার প্রদর্শন করেছে। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ে এক সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করেছিল উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী। সেখানেই প্রদর্শন করা হয়েছে এসব ক্ষেপণাস্ত্র।
বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার সরকারি বার্তাসংস্থা কেসিএনএনএর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার রাতের কুচকাওয়াজে মোট ১১টি হোয়াসং-১৭ আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করেছে উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন নিজে এই আয়োজনের প্রধান অতিথি ছিলেন।
হোয়াসং-১৭ ক্ষেপণাস্ত্রটি উত্তর কোরিয়ার সবচেয়ে দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র। দেশটির নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি প্রথম আইসিবিএম (ইন্টারকন্টিন্টাল বা আন্তঃমহাদেশীয়) ক্ষেপণাস্ত্র এটি; অর্থাৎ এই ক্ষেপণাস্ত্র এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশের যে কোনো দেশে আঘাত হানতে সক্ষম।
২০১৫ সালে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত প্রকল্পের ওপর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তবে সেই নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে প্রকল্প জারি রেখেছিল দেশটি; তারই ফসল এই হোয়াসং-১৭।
গত বছর এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত ও পরীক্ষা করেছিল উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনী। বুধবার প্রথমবারের মতো এটি প্রদর্শন করা হলো।
দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলের ইওহা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লেইফ-এরিক ইসলি রয়টার্সকে বলেন, ‘বুধবারের এই কুচকাওয়াজ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শনী ছিল উত্তর কোরিয়ার সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শনের একটি কৌশল। কিম জং উন আসলে বলতে চেয়েছেন, তিনি কারো তোয়াক্কা করেন না এবং ভবিষ্যতে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে তার জবাব দেবে।’
উত্তর কোরিয়া ও তার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন তীব্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ভাষণ ও বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রায় সময়ই ‘নিষ্ঠুর-আগ্রাসী শক্তি’ বলে উল্লেখ করেন কিম।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার এখন পর্যন্ত এই প্রদর্শনী প্রসঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে দেশটির প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত থিংকট্যাংক সংস্থা কারনেগি এনডোওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের কর্মকর্তা অঙ্কিত পাণ্ডে বৃহস্পতিবার এক টুইটবার্তায় উত্তর কোরিয়ার হোয়াসং-১৭ ক্ষেপণাস্ত্রের সক্ষমতা সম্পর্কে বলেন, ‘বর্তমানে যে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী, তা লন্ডভণ্ড করে দিতে এই ১১টি আইসিবিএম হোয়াসং-১৭ ক্ষেপণাস্ত্র যথেষ্ট।’