শনিবার (৫ আগস্ট) বিকেলে জেলার সদর উপজেলার দেওয়ানবাটি এলাকায় নিহতের বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে দুপুর দেড়টায় স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্বামী মোহাম্মাদ আলী হোসেনকে (৩৭) আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে গত ৩০ জুলাই রাত সাড়ে ১০টা থেকে নিখোঁজ ছিলেন ফিরোজা বেগম। এর চার দিন পর বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) নিজের স্ত্রীকে নিখোঁজ দাবি করে বাগেরহাট মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন মোহাম্মদ আলী হোসেন।
ফিরোজা বেগম দেওয়ানবাটি গ্রামের গফুর মোল্লা ওরফে ছুইটের মেয়ে। বছর দেড়েক আগে শহরের নাগেরবাজার এলাকার আজিজ মোল্লার ছেলে মোহাম্মাদ আলী হোসেনকে বিয়ে করেন স্বামী পরিত্যক্তা ফিরোজা বেগম। ফিরোজা বেগম মোহাম্মাদ আলী হোসেনের তৃতীয় স্ত্রী। এই ঘরে তাদের কোনো সন্তান নেই। ১৭ বছর আগে প্রথম স্বামীর কাছ থেকে এক মেয়েকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান ফিরোজা বেগম। সেই থেকে বাবার বাড়িতেই থাকতেন তিনি। মোহাম্মাদ আলীকে বিয়ে করলেও বাবার বাড়িতেই থাকতেন স্বামী-স্ত্রী। নিহতের প্রথম ঘরের একমাত্র মেয়ে পূর্ণিমা বেগম স্বামী রায়হান ব্যাপারীর সঙ্গে ঝালকাঠি থাকেন। মোহাম্মাদ আলী হোসেন গ্যাসের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
নিহতের চাচা বারিক মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৩০ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোহাম্মাদ আলী হোসেন জানান ফিরোজা নাকি বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে। আমি এসে দেখি রাস্তায় কেউ নেই। আলীর কাছে জানতে চাইলে বলে, অনেক দূর চলে গেছে এখন পাবেন না। পরে আসবে হয়ত। এরপর থেকে আর ফিরোজাকে পাইনি। হয়ত ওইদিনই আলী ফিরোজাকে মেরে টয়লেটের মধ্যে রেখে দিয়েছে। বিয়ের পর থেকেই আলী খুব বেপরোয়া ছিল। মাঝেমধ্যেই ফিরোজাকে মারধর করতো।
ফিরোজার মেয়ে পূর্ণিমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, চার দিন আগে মোহাম্মাদ আলী হোসেন মুঠোফোনে জানায় আমার মাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা আসতে চাইলে বলে আসার দরকার নেই। কোথায় জানি গেছে, পাওয়া যাবে। আমার স্বামীকে নিয়ে আজ দুপুরে দেওয়ানবাটি আসি। মা’র ঘরে ঢুকতেই দেখি, টয়লেটের চারপাশে নতুন মাটি এবং একটা ভয়ংকর গন্ধ আসছে। সে আমার মাকে মেরে টয়লেটের মধ্যে রেখেছে। আমার মায়ের হত্যার বিচার চাই।
তিনি আরও বলেন, বিয়ের পর থেকেই মোহাম্মাদ আলী আমার মাকে মারধর করত। আমা মা তাকে দুইটি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছে। এছাড়া আলী মার কাছ থেকে অনেক টাকাও নিয়েছে। মৃত্যুর আগে অনেকবার মাকে মেরেছে। একবার প্লাস দিয়ে দাঁত তুলে ফেলেছিল। কয়েকবার ছুরি দিয়ে আমার মাকে জবাই করতে চেয়েছে।
পূর্ণিমার স্বামী রায়হান ব্যাপারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুপুরে ঘরে ঢুকে কীসের গন্ধ জানতে চাইলে মোহাম্মাদ আলী হোসেন আসতেছি বলে দ্রুত বেরিয়ে যায়। তখন বুঝতে পারি কিছু একটা ঘটেছে। আলীর পিছনে দৌড় শুরু করি, একপর্যায়ে মোটরসাইকেল নিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় কিছুদূর গিয়ে আলীকে ধরে ফেলি। পরে ৯৯৯-এ ফোন করলে পুলিশ এসে আলীকে আটক করে। আমরা আলীর বিচার চাই।
এ বিষয়ে বাগেরহাট মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, খবর পেয়ে আলীকে আটক করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আলী স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে এই হত্যার ঘটনা ঘটছে। তবে হত্যার মূল কারণ ও হত্যার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।