খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ছাড়াও দুই কলেজ শিক্ষার্থীকে অপহরণের প্রতিবাদে রাজধানীতে যৌথ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের (ডিওয়াইএফ) উদ্যোগে ওই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে মুখোশধারী সন্ত্রাসী কর্তৃক শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দীঘিনালায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও খাগড়াছড়ি জেলার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা এবং দুই কলেজ শিক্ষার্থী কর্নিয়া চাকমা ও নিশা চাকমাকে অপহরণের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান নেতৃবৃন্দ। সেই সঙ্গে অবিলম্বে অপহরণকারীদের গ্রেফতারপূর্বক তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
সমাবেশে বক্তব্যকালে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা অভিযোগ করেন, এন্টি চাকমাসহ তিনজনকে অপহরণের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এটি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মদদে হয়েছে। সেনা সদস্য কর্তৃক কাপ্তাইয়ের স্কুলছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার লক্ষ্যে এবং এর বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে তিনজনকে অপহরণ করা হয়েছে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের এই নারী নেত্রী বলেন, ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ রাঙামাটির কুদুকছড়ি থেকে সেনা সহায়তায় ‘নব্য মুখোশ বাহিনীর’ সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও সদস্য দয়া সোনা চাকমাকে অপহরণ করেছিল। মন্টি, দয়া সোনা চাকমাকে অপহরণকারী সন্ত্রাসীদের বিচার না হওয়ায় গতকাল দীঘিনালায় পুনরায় অপহরণের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
এ সময় অবিলম্বে হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী এন্টি চাকমাসহ তিনজনকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত নব্য মুখোশ দুর্বৃত্তদের গ্রেফতারের পাশাপাশি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
অন্যদের মধ্যে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি জিকো ত্রিপুরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অপহরণ, মুক্তিপণ, খুন, হত্যা, ধর্ষণ প্রতিনিয়ত ঘটছে। এসবের বিরুদ্ধে পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উপরন্তু সন্ত্রাসী-মুখোশধারীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ে সেনা শাসন জারি রেখে পাহাড়ি জনগণের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে পাহাড়-সমতলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।
এছাড়া সমাবেশে বক্তব্যকালে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা অভিযোগ করেন, ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকার আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে এক অরাজকতার পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। পুনরায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো দিয়ে অন্যায় ধরপাকড়, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জনগণের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন জারি রাখা হয়েছে। নাগরিকের মত প্রকাশের অধিকারকে দমন করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছে। এই সাইবার নিরাপত্তা আইনও জনগণের ওপর নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হবে। সুতরাং এ কালো আইন বাতিল, দেশের অরাজকতা পরিস্থিতির উত্তরণসহ শাসকগোষ্ঠীর সকল অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে পাহাড়-সমতলে গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন জোরদার করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ইউনাইডেট ওয়ার্কাস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক প্রমোদ জ্যোতি চাকমা ছাড়াও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিকা প্রিয়া, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক তানজিম হায়দার চঞ্চল প্রমুখ।