দেশের নদনদী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নদী পরিশুদ্ধ করতে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
শুক্রবার (৫ মে) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউ সেমিনার হলে বিএনপি আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশ ও নদী সেমিনারে’ তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের অব্যবস্থাপনার কারণে, আমাদের প্রাণ যেগুলো নিয়ে বেঁচে আছি যেগুলোর সাথে, আমাদের জীবন-জীবিকার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য, সেগুলোকে আমরা নিজেরাই হত্যা করছি, ধ্বংস করে দিচ্ছি। আজকে এই সরকার উন্নয়নের ঢাক ঢোল পেটায় প্রতিনিয়ত। কিন্তু নদীকে পরিশুদ্ধ করার জন্য তাদের কোনো পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত চোখে পড়েনি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে বুড়িগঙ্গা নদীর পাশ দিয়ে যাওয়া যায় না এতটাই দুর্গন্ধ, নদীর উপর দিয়ে যাবেন তো দূরের কথা। এত রাত নদীটা মরে গেছে, এখন শুরু হয়েছে ধলেশ্বরী শীতলক্ষ্যা। আবার ধামরাইতে অনেক ছিল যেগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমান একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। যে কারণে তিনি খাল খনন শুরু করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার সময় পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, যার ফলে ঢাকায় দূষণ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। এগুলো গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে এখন ঢাকা পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরীর মধ্যে একটি। এখানে সরকারের কোনো লক্ষ্য নেই। জনগণের জীবন সুন্দর করার জন্য, জনগণের ভবিষ্যতকে সুন্দর করার জন্য, জীবন জীবিকার পথটা সুগম করার জন্য তাদের কোনো আগ্রহ নেই। কারণ জনগণের কাছে তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। তারা নির্বাচিত নয়, জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। যে করে হোক ক্ষমতায় টিকে থাকতে হবে, সে কারণে এসব বিষয়ের ওপর কোনো গুরুত্ব নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তুরাগ নদীর পাশে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লোকের সহযোগিতায়, তাদের সমর্থনে বৃহৎ গ্রাম গড়ে তুলেছে। সেই গ্রামগুলো একেবারে নদীর উপরে গড়ে তুলেছে, নদী উপর গড়ে উঠেছে, নদী ভরাট করে গড়ে তুলেছে। এসব বিষয়ে সমাধান করার খবর নেই, এই সরকারের সাথে যারা জড়িত তারাই এই কাজগুলো করছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
মহাসচিব বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের মানুষকে যদি টিকে থাকতে হয়, ভবিষ্যৎ যদি সুন্দর করতে হয় এবং ভবিষ্যতকে সত্যিকার অর্থে যদি গণতন্ত্রমুখী করতে হয়, তাহলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। আজকে গণতন্ত্র হয়ে বলেই কোনো জবাবদিহিতা নেই।’
তিস্তার পানি না দেওয়ায় ওই অঞ্চলগুলো মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে সরকার কোনো কথা বলেনি। টিপাইমুখ বাঁধ যখন নির্মাণ করতে যায়, একই সাথে বিএনপি আপত্তি করেছে এবং বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলেছে। সম্ভবত ইলিয়াস আলীকে সেই কারণে জীবন দিতে হয়েছে।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা টিকিয়ে রাখার জন্য, গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসতেই হবে। গণতন্ত্র ফিরে এলে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারব, আমাদের সমস্যাগুলো জাতির সামনে তুলে ধরতে পারব। পরিবর্তনের একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, বিএনপি মিডিয়া সেল আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ড. এ কে এম এনামুল হক, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এম জাকির হোসেন খান, ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।