বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন আসিফ মাহমুদ।
যড়যন্ত্র নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা কিছু অর্থনৈতিক অসঙ্গতি লক্ষ করেছি। বিশেষ করে পিরোজপুর জেলায় বিভিন্ন প্রকল্পে দেওয়া বরাদ্দে অর্থ লোপাটের প্রাথমিক প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এর সাথে সাবেক মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেনের প্রাথমিক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেটার বিস্তারিত তদন্ত এখনো চলছে। আমরা প্রথমে ধারণা করেছিলাম, তদন্তের যে ফাইলগুলো ছিল মন্ত্রণালয়ে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু এটি যেহেতু জেলা পর্যায়ে সংগঠিত হয়েছে, সেজন্য আমরা এগুলো উদ্ধার করতে পারবো। আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা পিরোজপুরে আছেন।
উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটিতে থাকবেন যারা
তিনি আরও বলেন, এই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, ওনার সঙ্গে থাকবেন গৃহায়ন সচিব, পুলিশের আইজিপি, কমিটির সদস্য সচিব থাকবেন ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্স এর প্রধান, সশস্ত্র বাহিনীর একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েট থেকে ৩ জন বিশেষজ্ঞ যথাক্রমে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার।
অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে সরকার কী ধারণা করছে এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকার এভাবে ধারণা করতে পারে না। সরকার বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। কারণ এটা আমাদের সকলের নিরাপত্তার বিষয় এবং এখানে রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল থাকে। ফলে এ বিষয়টিকে সরকার খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। যার জন্য তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে উচ্চপর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে।
আগুন নেভাতে দীর্ঘ সময় লাগা এবং দুই প্রান্তে আগুনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগুনটা আরও আগে নেভানো যেত কিনা, আগুন নেভাতে বিলম্ব হয়েছে কিনা— এগুলো কমিটির প্রতিবেদনে জানা যাবে; আমরা উত্তর দিতে পারবো না। আপনারা প্রথম দিকে গিয়ে থাকলে, ভিডিও করে থাকলে তদন্ত কমিটিকে দিয়ে সহায়তা করতে পারেন। অনেক প্রশ্ন অনেকের মনে আছে; সব প্রশ্নের উত্তর যদি আমরা আমাদের মতো দিতে থাকি, তাহলে তো তদন্ত কমিটি করে কোন লাভ হচ্ছে না। তদন্ত কমিটিকেই যার যা বক্তব্য আছে, কারো কাছে কোনো তথ্য থাকলে প্রয়োজনীয় মনে করে জানিয়ে দিবেন। এই ঘটনার অবশ্যই একটা সুষ্ঠু এবং বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে। আজকের ঘটনার কারণটা যখন আমরা নির্ধারণ করতে পারবো, সে অনুযায়ী আমরা অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেবো। এই ধরনের ঘটনা আর যাতে কখনো না ঘটে, সে ব্যবস্থাও আমাদের নিতে হবে। এখানে নিরাপত্তার ব্যত্যয় ছিল কিনা, অন্য কোনো বিষয় ছিল কিনা, কী কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে— এগুলো সবই তদন্ত কমিটি খতিয়ে দেখবে।
অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে ষড়যন্ত্র বলা হচ্ছে। সরকারের কাছে কি কোন গোয়েন্দা তথ্য ছিল— এমন প্রশ্নে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, গোয়েন্দা তথ্য থাকলে সরকার ব্যবস্থা নিত। তথ্যের প্রবাহ ঠিক আছে কিনা, তা তদন্ত কমিটির মাধ্যমে দেখতে হবে। কিন্তু তথ্য থাকলে আমরা বসে থাকতাম না।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ তদন্তই আলোর মুখ দেখে না, এ তদন্ত কি নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হবে এ প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, তিনদিনের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন তারা দেবেন। আমরা সেখানে অফিস করি, এটাতো আমাদেরও নিরাপত্তার বিষয়। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথির বিষয়। প্রাথমিক প্রতিবেদনের পরে তারা যখন চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেবেন তা অবশ্যই আপনারা পাবেন। তদন্তের স্বার্থে হয়তো প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ সম্ভব নাও হতে পারে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দ্রুততার সঙ্গেই হবে। সেই প্রতিবেদন আপনারা পাবেন।
আওয়ামী লীগের সহযোগী আমলা লীগ ও মিডিয়া লীগের সদস্যদের সরকার ছাড় দিচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে দাবি করে এক প্রশ্নের জবাব সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অপরাধী সাব্যস্ত করার আগে তদন্ত করতে হয়, সেই অনুযায়ী অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, অনেককে চাকরি হতে সরানো হয়েছে, কাউকে কাউকে ওএসডি করা হয়েছে, কেউ কেউ কারাগারেও গেছেন। প্রশাসনের গতিটা রেখে ঢেলে সাজানোর কাজ আমরা করছি। এটা এমন না যে কোন দাগী আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে কিন্তু আমরা তদন্ত করি নাই। সরকার আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগুচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা অনেক ডিজিটালাইজেশনের কথা শুনে দায়িত্বে এসেছিলাম। আগুনের ঘটনার পরে আমরা দেখলাম যে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল আমাদের কোন মন্ত্রণালয় পাচ্ছে না। নামকাওয়াস্তে একজন কর্মকর্তা ও প্রযুক্তি। ডিজিটাইলাজেশনের সুফল আমরা পাচ্ছি না।
সচিবালয়ে নিরাপত্তার কোন ব্যতয় ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, এ প্রশ্নটা আমাদেরও। সচিবালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি আদৌ ফেল করেছে? এটা কি কোন মনুস্যসৃষ্ট বিপর্যয় নাকি অন্য কোন বিপর্যয়? এগুলোর উত্তর পাওয়ার জন্য আমাদের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের অপেক্ষা করতে হবে। সব সম্ভবনা মাথায় রেখে সরকার তদন্ত কমিটি করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে ধারণা আলোচনা করাটা ঠিক হবে না।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সচিবালয়ের নিরাপত্তার জন্য একজন একজন করে এসপি ও এএসপি, এছাড়া প্রায় ৫৬০ জনের মত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য আছে। ভেতরে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এরই মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে।