নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবিতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করছেন অভিভাবকরা। তাদের দাবি, নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা পদ্ধতি বাতিল করায় বইয়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে শিক্ষার্থীদের। তারা আরও বেশি ডিভাইস মুখী হচ্ছে। অভিভাবকদের এ আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেছেন শিক্ষকরাও।
এদিকে নির্বাচনের আগে এ ধরনের আন্দোলনকে ভিন্নভাবে দেখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাই আন্দোলনকারী অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের দিকে নজর রাখতে শিক্ষকদের ডেকে নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সমস্যা ও উত্তরণের উপায় নিয়ে ঢাকা অঞ্চলের এগারো জেলার প্রায় পাঁচশ প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠকে গতকাল এ নির্দেশনা দেন মন্ত্রী। পর্যায়ক্রমে সব অঞ্চলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গেই নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সভা হবে বলে জানা গেছে।
ঢাকা অঞ্চলের প্রায় সাড়ে চার’শ প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সভায় নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অসুবিধা-পরামর্শ, নানা অপপ্রচার, প্রতি শাখায় শিক্ষার্থী সংখ্যা, মূল্যায়ন, শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী ছাড়াও বিভিন্ন পরিচালক, উপ-পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, অপপ্রচার নিয়ে সতর্ক থাকতে প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তাদের জানানো হয়েছে, শিগগিরই মূল্যায়ন নির্দেশিকা স্কুলে-স্কুলে যাচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের তথ্য সংগ্রহে আগামী নভেম্বর মাসে একটি অ্যাপ চালু করা হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতেও নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করে হবে বলে জানানো হয়েছে সভায়। আর প্রতি শাখায় ৫৫ জন শিক্ষার্থী নিশ্চিত করা, টিচার্স গাইড অনুসরণ ও অভিভাবকদের নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে জানানোর নির্দেশনা এসেছে।
সভায় অংশ নেওয়া কয়েকজন শিক্ষক বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বক্তব্য নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি আছে, অথবা একটি মহল এ আন্দোলনকে উসকে দিচ্ছে। তা নিয়ে নানা অপপ্রচার চলছে। এসময় ভিকারুননিসা, আইডিয়ালসহ রাজধানীর নামিদামি স্কুলের সামনে অভিভাবকদের জামায়েতের বিষয়টি তুলে প্রধান বা সহকারী প্রধান শিক্ষকরা শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছেন, জমায়েত হওয়াদের মধ্যে আসল অভিভাবক ছিলেন না। সভায় নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
অভিভাবকদের নতুন শিক্ষাক্রমের ক্লাস পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া, অভিভাবক সমাবেশ আয়োজন ও ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির সদস্যদের সম্পৃক্ত করার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সভায় নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে প্রধান শিক্ষকদের মতামত নেওয়া হয়।
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে কী কী অসুবিধা হচ্ছে তা জানতে চেয়েছেন মন্ত্রী। প্রধান শিক্ষকরা নিজ নিজ মতামত জানিয়েছেন। অনেকে প্রধান শিক্ষক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়টি তারা বুঝতে পারছেন না। বিশেষ করে শিখনকালীন মূল্যায়ন নিয়ে অষ্পষ্টতা রয়েছে। এ বিষয়ে মাস্টার ট্রেইনারদের সঙ্গে আলোচনা করতে শিক্ষকদের বলা হয়েছে। সভায় আরও জানানো হয়েছে, বাৎসরিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা শিগগিরই স্কুলগুলোতে পাঠানো হবে।
সভায় ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বলেছেন, তার কলেজের সামনে যারা মানববন্ধন করেছিলেন তাদের কেউই প্রকৃত অভিভাবক নন। কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, যেসব অভিভাবক নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের বিরোধিতা করছেন তাদের অনেকেই অভিভাবক নয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা রাজনৈতিকভাবেও প্রভাবিত হচ্ছেন।