স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন নতুন পথ উন্মুক্ত হবে, বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগও। তবে এসব সম্ভাবনার পাশাপাশি বেশকিছু চ্যালেঞ্জও অপেক্ষা করছে বেসরকারি খাতের জন্য। যা মোকাবিলায় বেসরকারি খাতকে এখনই প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া কনভেনশন হলে আয়োজিত এফবিসিসিআইর বার্ষিক সাধারণ সভায় এই আহ্বান জানান তিনি।
করোনা সংক্রমণজনিত কারণে ২০২০-২০২১ সেশনের বার্ষিক সাধারণ সভা নির্ধারিত সময়ে আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। ফলে বুধবার একই ভেন্যুতে পৃথকভাবে ২০২০-২০২১ এবং ২০২১-২০২২ সালের এফবিসিসিআইর বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এ জন্য গবেষণা, উদ্ভাবন এবং পণ্য বৈচিত্রকরণে জোর দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি রফতানি বাণিজ্যকে টেকসই করতে সরকারকে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ), প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্টসহ (পিটিএ) দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিভিন্ন দফতরের সনদ প্রাপ্তি এবং এর নবায়নে জটিলতা কমানো ছাড়াও অটোমেশন কার্যকর ও বন্দর ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
জসিম উদ্দিন বলেন, ‘কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের ফলে খাদ্য, কৃষিপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশসহ পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে। উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে মুদ্রা বিনিময় হারেও। ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পক্ষে।’
এমন বাস্তবতায় প্রতিযোগী মূল্যে পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ছাড়াও দক্ষ কর্মী তৈরি এবং ব্যবসা পরিচালনায় দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
এ সময় বাংলাদেশি স্থানীয় পণ্য ও সেবাকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার জন্য তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মেলা ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ’ আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।
সেই সঙ্গে চলমান পরিস্থিতিতে, উৎপাদনশীলতা অব্যাহত রাখতে জেলা চেম্বার এবং অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। পাশাপাশি খাতভিত্তিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরার পরামর্শ দেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সরকারের ভিশন ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থা এবং গ্রিন ইকোনমি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বেসরকারি খাত। এ জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর বিশেষ জোর দেন তিনি।
২০২৬ এ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন, ২০৩০ এর এসডিজি অর্জনসহ সরকারের ৮ থেকে ৯টি লক্ষ্যের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা সরাসরি জড়িত উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নত দেশ গড়তে আগামী বাজেটে এফবিসিসিআইর সুপারিশসমূহকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়াসহ ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা দরকার। এ জন্য দেশে আমদানির পরিমাণ কমিয়ে এনে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এ দিন সভার উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, মনোয়ারা হাকিম আলী, সাবেক সহ-সভাপতি আবু আলম চৌধুরী, দেওয়ান সুলতান আহমেদ, হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
