নতুন কারিকুলাম বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের পর এবার রাস্তায় নেমেছেন অভিভাবকরা। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত করেন তারা। তাদের এ আন্দোলনের সংহতি জানান শিক্ষকরাও। সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
অভিভাবকরা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে হবে আটটি বিষয়। নতুন শিক্ষাক্রমে তাত্ত্বিক বিষয়ের চেয়ে শিখনকালীন মূল্যায়নকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়া হয়েছে সাময়িক পরীক্ষাও। পরীক্ষা পদ্ধতি না থাকায় ছাত্র ছাত্রী অধ্যয়নমুখী হচ্ছে না। বইয়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় তারা ডিভাইসমুখী হচ্ছে।
তারা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তে দলগত কাজ করার কারণে শিক্ষার্থীরা বন্ধু বান্ধবীর বাসায় বা অন্য কোথাও একত্রিত হয়ে তা সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অধিকাংশ অভিভাবক স্কুল ছুটির পর তার সন্তানকে অন্য কারো বাসায় নিয়ে যেতে আগ্রহী নয় এবং স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।
অভিভাবক মিলন রহমান বলেন, নতুন কারিকুলাম পড়ে ছেলেরা হবে হোটেল বয় আর মেয়েরা হবে কাজের বুয়া। তারা তালা বাসনের ছবি তুলে প্রদর্শনী করবে। আমরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে হোটেল বয় আর কাজের বুয়া বানাতে চাই না। অবিলম্বে এ সিলেবাস বাতিল করার দাবি জানাই।
মানববন্ধনে অভিভাবকরা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে সবচেয়ে বড় সমস্যা দলগত কার্যক্রম। বর্তমান শিক্ষাক্রমে শিখনকালীন কাজের অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রোজেক্ট করতে গিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকতে হচ্ছে। এতে তারা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়ছে। অন্যদিকে প্রোজেক্টগুলোর ইকুইপমেন্ট যন্ত্র পাওয়া যায় না, সেই সঙ্গে চড়া দামের কারণে এগুলো কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা।
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর মা বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষক, শ্রেণিকক্ষসহ বিদ্যমান অবকাঠামোতে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন কঠিন। সবচেয়ে বেশি সমস্যা পড়ছেন শিক্ষকরা। তারা নিজেরাই এখনো নতুন সিলেবাসের সঙ্গে খাপ খাইয়ে উঠতে পারেনি। তারা কীভাবে শিক্ষার্থীদের বুঝাবেন? তাই শিক্ষকরা আন্দাজের ওপর গ্রুপ স্টাডি এবং প্রোজেক্ট দিচ্ছে। সন্তানরা তো বুঝেই না কখনও কখনও আমরাও বুঝি না।
তিনি বলেন, শহরের সচেতন অভিভাবকরা এই শিক্ষা উপকরণের যোগান দিতে পারলেও মফস্বল এলাকার অভিভাবকরা এগুলোর যোগান দিতে পারছেন না। ফলে দরিদ্র পরিবারের ছাত্র ছাত্রী ঝরে পড়ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি।
তিনা ইসলাম নামে একজন অভিভাবক বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নতুন এই কারিকুলামটি দেশের জন্য অনুপযুক্ত। তাই তারা ‘নতুন এই কারিকুলাম সংস্কার করে অন্তত ৫০/৬০ নম্বরে দুই সাময়িক লিখিত পরীক্ষা পদ্ধতি চালু, নম্বর ও গ্রেড ভিত্তিক মূল্যায়ন, প্রতি বছর প্রতি ক্লাসে রেজিস্ট্রেশন ও সনদ প্রদানের সিদ্ধান্ত বাতিল, স্কুল পিরিয়ডে সমস্ত প্রজেক্ট সম্পন্ন করা, এবং সমস্ত ব্যবহারিক ব্যয় স্কুলকে বহন করতে হবে।
এসব দাবি বাস্তবায়নে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের পক্ষ থেকে বেশকিছু কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রতি স্কুলের সামনে মানববন্ধন; নতুন কারিকুলাম নিয়ে আলোচনা সভা; স্কুলে স্কুলে জরিপ কার্যক্রম; কারিকুলাম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে বৈঠক; ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষাবিদ, গবেষক, মন্ত্রী, মাউশি কর্মকর্তাদের নিয়ে কনফারেন্স/মত বিনিময় সভা; প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান; সম্মিলিত শিক্ষা কমিশন গঠন ও শিক্ষানীতির পূর্ণ প্রস্তাবনা সরকারের কাছে প্রেরণ।
জানা গেছে, বর্তমান শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থাকলেও নতুন এই শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিক পর্যন্ত থাকছে না কোনো বিভাগ বিভাজন। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সবাইকে পড়তে হবে ১০টি অভিন্ন বিষয়। বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচি মিলিয়ে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু নতুন কারিকুলামে কেবল দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ওপর অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি পরীক্ষা।