মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রে এই ছত্রাকের ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে প্রথম একজন ব্যক্তিকে ক্যানডিডা অরিসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। মঙ্গলবার সিয়াটল ও কিং কাউন্টির জনস্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, গত সপ্তাহে তারা আরও তিনজনকে ক্যানডিডা অরিসে আক্রান্ত হিসেবে পেয়েছেন।
ফাঙ্গাস বা ছত্রাক হিসেবে পরিচিত ক্যানডিডা অরিস সাধারণত যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের শরীরে সংক্রমণ ঘটায়। বেশ কিছু জনপ্রিয় অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধী ক্ষমতা রয়েছে ছত্রাকটির। হাসপাতালের রোগী— যারা ফিডিং টিউব, শ্বাস নেওয়ার টিউব বা ক্যাথেটার ব্যবহার করেন, তাদের শরীরে এটা খুব সহজেই ঢুকে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) বলছে, ক্যানডিডা অরিস শরীরের বিভিন্ন অংশে যেমন— রক্তপ্রবাহে, খোলা ক্ষত এবং কানে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। সংক্রমণের স্থান এবং মাত্রায় ছত্রাকটির লক্ষণ প্রকাশ পায়। সাধারণ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের সঙ্গে ক্যানডিডা অরিসের সংক্রমণের মাঝে তেমন কোনও পার্থক্য নেই। তবে সংক্রমণের সাথে সংশ্লিষ্ট লক্ষণ এবং উপসর্গগুলোর মাধ্যমে ছত্রাকটি শনাক্ত করা হয়।
সিডিসির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তি অসুস্থ না হয়ে পড়লেও তার ত্বক এবং শরীরের অন্যান্য স্থানে এই ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত অসুস্থ না হয়েও অন্যদের শরীরে ছত্রাকটির সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে। পরে সেই ব্যক্তিও অন্যের শরীরে ছত্রাকটির বাহক হিসেবে কাজ করতে পারেন।
সারা বিশ্বে যারা ক্যানডিডা অরিসে সংক্রমিত হন তাদের প্রায় ৬০ শতাংশই মারা যান। এই ছত্রাক ওষুধ প্রতিরোধী হওয়ায় এর সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও অনেক সময়ই ক্যানডিডা অরিসের সংক্রমণকে অন্য কোনও অসুস্থতা বলে ভুল করা হয়। যার কারণে অনেক সময় আক্রান্ত রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পান না।
সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, এর ফলে রোগীকে হয় বেশিদিন ধরে চিকিৎসা নিতে হয় অথবা তার অবস্থা আরও বেশি খারাপ হয়ে পড়ে। কেউ যদি ছত্রাকটির মাধ্যমে সরাসরি সংক্রমিত হন অথবা অন্য রোগীর মাধ্যমে আক্রান্ত হন, তাহলে উভয়ক্ষেত্রেই ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের থেকে তাদের আইসোলেশনে রাখতে হবে।
ক্যানডিডা অরিস ছোঁয়াচে হওয়ায় কেউ এই ছত্রাকে সংক্রমিত হলে তার সংস্পর্শে আসা অন্য ব্যক্তিও সংক্রমিত হতে পারেন। যে কারণে সংক্রমিত ঝুঁকিপূর্ণ রোগীকে আলাদা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এমনকি রোগীর পরিচর্যায় নিয়োজিত ব্যক্তিকে গ্লাভস ও গাউন পরার কথাও বলছেন তারা।
সাধারণত ক্যানডিডা অরিসের সংক্রমণ সচরাচর খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে কেউ যদি দীর্ঘ সময় ধরে হাসপাতাল কিংবা নার্সিং হোমে থাকেন এবং চিকিৎসার কারণে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন, তাহলে তার এই ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। কারণ ক্যানডিডা অরিস অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রমণরোধী ভালো মানের ব্যাকটেরিয়াও মেরে ফেলতে সক্ষম।
বিশ্বে ১৫ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালে জাপানের রাজধানী টোকিওর মেট্রোপলিটন গেরিয়াট্রিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর কানে প্রথম পাওয়া যায় এই ছত্রাক। তারপর থেকে গত কয়েক বছরে বিশ্বের অনেক দেশে এই ছত্রাকের সংক্রমণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কেবল ২০২২ সালেই এই ছত্রাকে সংক্রমিত হয়েছিলেন ২ হাজার ৩৭৭ জন; যা ২০১৬ সালের তুলনায় ৫৩ গুণ বেশি। আর ২০২১ সালে বিশ্বে এই ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক হাজার ৪৭১ জন।
সিডিসি বলেছে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে প্রাণঘাতী এই ছত্রাকের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশে ক্যানডিডা অরিস সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। যেভাবে এই ছত্রাকের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে সারা বিশ্বের জন্য ক্যানডিডা অরিস ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে সিডিসি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।