আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যদি দ্বিতীয়বার হত্যার হুমকি দেওয়া হয় তবে দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেছেন, বিএনপি নেতারা প্রায়ই হুমকি-ধমকি দেয়। সেই সূত্র ধরে বিএনপির এক নেতা সরাসরি হত্যার হুমকি দিয়েছে। যারা হত্যার হুমকি দিচ্ছে তাদের পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিতে চাই- বাংলাদেশে যদি দ্বিতীয়বার এই উক্তি হয় তাহলে এই দেশের জনগণকে নিয়ে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।
সোমবার (২২ মে) বেলা ১১টায় রাজধানীর ইনস্টিটিউট অফ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশে (আইডিইবি) আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ওই সভার আয়োজন করে ‘৭১ ফাউন্ডেশন’।
বিএনপি-জামায়াত শেখ হাসিনাকে বারবার হত্যা করার চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯ বার তাকে হত্যার জন্য আক্রমণ করা হয়েছে। জনগণের ভালোবাসা-দোয়া ছিল, যার কারণে আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন।
হানিফ বলেন, যে বিএনপি নেতা হত্যার হুমকি দিয়েছে, আমরা বলেছি তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য। আমরা আইন নিজের হাতে নিতে চাই না। যদি চায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওই ব্যক্তিকে পিটিয়ে রাস্তায় তাকে শায়েস্তা করতে পারে। কিন্তু আমরা সেটা করতে চাই না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যদিয়ে আমরা তার শাস্তি নিশ্চিত করতে চাই।
বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই বিদেশি প্রভুদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো যাবে না। যতই লাফালাফি করুন শেখ হাসিনার প্রতি মানুষের আস্থা আছে। যতদিন শেখ হাসিনার সঙ্গে এ দেশের মানুষ আছে, ততদিন তার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। ইনশাআল্লাহ্, আপনারা সেটা দেখতে পাবেন।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘স্যাংশন’ আসছে এই খুশিতে বিএনপি নেতারা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। স্যাংশন আসছে রাষ্ট্রের প্রতি? আপনারা (বিএনপি) খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমি বিশ্বাস করি, এই রাষ্ট্রের ওপর কখনো স্যাংশন হবে না।
যদি স্যাংশন আসে তবে সে দেশের কি পরিণতি হয় তা দেখার জন্য বিএনপি নেতাদের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা একটু ইরান, ইরাক, মিশর লিবিয়ার দিকে তাকান। ইরান আজকে কোথায়, ইরাক আজকে কোথায়? অর্থনৈতিক দেউলিয়ার পথে চলে গেছে। যে সমস্ত রাষ্ট্রের ওপর স্যাংশন এসেছে সেসব দেশ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটা আক্ষেপ করে বলেছিলেন, এই স্যাংশনের টার্গেট হচ্ছে সবসময় মুসলিম দেশগুলো। মুসলিম বিশ্বকে দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
বিদেশি দূতাবাসগুলোকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আপনাদের চাওয়া আগামী নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহণে অবাধ-সুষ্ঠু হোক। তাদের বলি- আমরাও তো সেটা চাই। আমাদের-আপনাদের চাওয়ায় পার্থক্য নেই। তাহলে কেন উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে।
হানিফ বলেন, নির্বাচন নিয়ে যার যত দাবি আছে, চিন্তা-ভাবনা আছে সবগুলো সংবিধানের আলোকে ভাবতে হবে। সংবিধানের মধ্যে থেকে পথ খুঁজে বের করতে হবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, মানুষ যখন দুর্বিসহ জীবন পার করছিল ঠিক এমন সময়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে দেশে ফিরে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা সেদিন দেশে ফিরে কথা দিয়েছিলেন আইনের শাসন ফিরিয়ে আনবেন, বাঙালির মুক্তির জন্য কাজ করবেন। দীর্ঘ লড়াই-আন্দোলন শেষে ১৯৯৬ সালে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করেছিলেন। বহু প্রতিবন্ধকতার পথ মাড়িয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মধ্যদিয়ে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২০০৪ সালে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষের দোয়ায়, আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মীকে হারিয়েছিলাম, ৫০০’র বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছিলেন। সেদিনের বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় মামলাও হয়নি। মামলা করতে দেওয়া হয়নি।
৭১ ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাজেদা শওকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. খালেদ শওকত আলী। পাশাপাশি সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ৭১ ফাউন্ডেশন সাধারণ সম্পাদক ড. জেবুন্নাহার।
এছাড়া সভায় অন্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ, লেখক ও গবেষক মারুফ রসুল, শহীদ বুদ্ধিজীবী সন্তান ও অভিনেত্রী শমী কায়সার প্রমুখ।