দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত হয়েছে, তবে চূড়ান্ত ঐকমত্য হয়নি। এর গঠন নিয়ে আছে মতভেদ। এদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিদ্যমান পদ্ধতি বিলুপ্তির বিষয়ে প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক দল একমত হলেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে মতভেদ আছে। একইভাবে মতভেদ আছে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল নিয়েও।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ শেষে বিকেলে এ কথা জানান জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি জানান, জাতীয় সংসদে উচ্চ ও নিম্নকক্ষ রাখার প্রস্তাবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। একইভাবে, প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ নির্ধারণের ক্ষেত্রেও বেশিরভাগ দলের সম্মতি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল নিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, দুই মেয়াদের বেশি একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কয়েকটি দল একই ব্যক্তি দুইবার প্রধানমন্ত্রী থাকার বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলেছে। অন্য আরও কিছু প্রস্তাবও এসেছে। আমরা এই আলোচনা অব্যাহত রাখবো এবং আগামী রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় আবার আলোচনা শুরু করবো। আমরা আশা করবো এ সপ্তাহে যেসব বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে, সেগুলো প্রথমে আলোচনা করবো।
তার ভাষ্য, আমরা স্পষ্ট করতে চাই, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের পক্ষে মত দিয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়েও অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দুই মেয়াদের কথা বলেছেন। তবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হলে আরও আলোচনার প্রয়োজন আছে। আগামী সপ্তাহে অসমাপ্ত বিষয়গুলো নিয়ে পুনরায় আলোচনা হবে।
আলী রীয়াজ জানান, বৃহস্পতিবার সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ এবং নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও গতকাল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা অসমাপ্ত থাকায় তা পুনরায় আলোচনা হয়।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটার কারা হবেন, তা নির্ধারণের জন্য সংসদের কাঠামো স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন বলেই আলোচনায় উঠে এসেছে।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, যেহেতু রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সংসদের ধরন নির্ধারণ হওয়া জরুরি, তাই এ বিষয়ে আগে নির্ধারণ হতে হবে। এ প্রসঙ্গে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত যে, সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হতে পারে।
দ্বিকক্ষ আইনসভা নিয়ে সবাই একমত হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। ১০০ সদস্য বিশিষ্ট হওয়ার ক্ষেত্রেও একমত হয়েছে। তার মানে এই নয় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে আরও সংশ্লিষ্ট বিষয় রয়েছে, যেগুলো ঐকমত্য হলে পরে জানানো হবে।
কিন্তু যেগুলো একমত হবে না তার ভবিষ্যৎ কী হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী অনেকগুলো বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারবো। সব বিষয়ে আমরা একমত হতে পারব না সেটা আগেও বলেছি। তারপরও যেগুলো উল্লেখযোগ্য বিষয়ে একমত হতে পারবো না, সেগুলো আমরা ইতিবাচকভাবে তুলে ধরব। আমরা আশা করব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে আমরা একমত হতে পারবো।
রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন মত দিলেও এবং আলোচনায় বিভিন্ন মত থাকলেও আলোচনা সৌহার্দপূর্ণ হচ্ছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রিয়াজ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতে কেউ দ্বিধান্বিত নয়।
এদিন ইলেকটোরাল কলেজের মাধ্যমে ভোটের বিষয়ে অধিকাংশ দল একমত হয়েছে। তবে গোপন ব্যালটে হবে কিনা এই বিষয়ে মতভেদ আছে। দ্বিতীয়ার্ধেও এই বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দ্বিকক্ষ সংসদের গঠন কেমন হবে সে বিষয়ে আলোচনা জরুরি। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন বিষয়ে অন্যরা একমত হলেও, একমত নয় বিএনপি। কারণ সংবিধান সংশোধনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
এছাড়া আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী দুই মেয়াদ বা দুইবারের বেশি নয় এই বিষয়ে সবাই একমত হলেও বিএনপি বলছে পর পর দুইবারের বেশি নয়।
জামায়াতের নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়েও মেজরিটি পার্টি দুই মেয়াদের বেশি হতে পারবেনা বলে মত দিয়েছে। যদিও বিএনপিসহ কয়েকটি দল ভিন্নমত প্রকাশ করেছে।
আমার বাংলাদেশ পার্টির আহবায়ক মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আলোচনা ভালো হচ্ছে, খাওয়া দাওয়া ভালো হচ্ছে কিন্তু আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছেনা। এনসিসি, রাষ্ট্রপতির নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিন্তু ঐক্যমত আসেনি। জনগণ আমাদের দিকে চেয়ে আছে। আমাদের দল ব্যথিত। রাষ্ট্রের এতো অর্থ ব্যয় হচ্ছে কিন্তু ফল হচ্ছেনা। যারা বড় দল তাদের দায়িত্ব বেশি। তাদের ত্যাগ বেশি। তারা যদি এই প্রসেস পরিবর্তন না চায় তাহলে পরিবর্তন হবেনা।
তিনি আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশনেরও দায় আছে। তারা প্রিসাইজলি যে দলের ভিন্নমত আছে সেটা নিয়ে আলোচনা করলে এত দীর্ঘায়িত হতো না।