দেড় বছর ধরে সিলেটের কৈলাসটিলা এলপিজি প্লান্টের (আরপিজিসিএল প্লান্ট) উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। প্লান্টটি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অন্যদিকে আরপিজিসিএল প্লান্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আরপিজিসিএলের উৎপাদিত এলপি গ্যাসের ওপর নির্ভর করে স্থাপিত এলপি গ্যাস বটলিং কারখানাটির উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। একই কারণে গোলাপগঞ্জের দাড়িপাতনের কৈলাসটিলা এমএসটিই গ্যাসফিল্ড প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ এনজিএল পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সবদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারের এ লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি। কবে নাগাদ এটি পুনরায় চালু হতে পারে তাও বলতে পারছেন না কেউ।
সিলেটের গোলাপগঞ্জের দাড়িপাতনে রয়েছে কৈলাসটিলা এমএসটিই গ্যাসফিল্ডের খনি। মূলত এই খনি থেকে উত্তোলিত মূল্যবান এনজিএল (ন্যাচারাল গ্যাস লিকুইড) কাজে লাগাতে ১৯৯৮ সালে পেট্রোবাংলার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে আরপিজিসিএল (রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড) প্লান্টটি স্থাপন করা হয়। এই প্লান্টের অবস্থান গ্যাস খনিরই পাশের গোলাপগঞ্জ উপজেলা সদরের টিকরবাড়ি এলাকায়। যেটি জ্বালানি তেল পেট্রল, ডিজেল এবং এলপি গ্যাস উৎপাদনকারী কৈলাসটিলা এলপিজি প্লান্ট নামে পরিচিত।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠান বন্ধ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বেশির ভাগ মুখ খুলতে চান না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, এনজিএল সংরক্ষণে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় একে সরাসরি প্রক্রিয়াকরণ প্লান্টে পাঠাতে হয়, অন্যথায় পুড়িয়ে ফেলতে হয়। গোলাপগঞ্জের দাড়িপাতনের কৈলাসটিলা এমএসটিই গ্যাসফিল্ড খনি থেকে উত্তোলিত ৫৭ হাজার লিটার এনজিএল প্রতিদিন সরাসরি আরপিজিসিএল প্লান্টকে দেয়া হতো। আরপিজিসিএল প্লান্ট এনজিএল থেকে পেট্রল ও এলপি গ্যাস উৎপাদন করেছে। বর্তমানে আরপিজিসিএল প্লান্ট বন্ধ থাকায় গ্যাসফিল্ড এনজিএল পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে। প্রতিদিন ধ্বংস করা এনজিএলের বাজারমূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা হবে বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা। সেই হিসেবে প্রতি মাসে ৬ কোটি টাকার এনজিএল পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) একটি নির্দিষ্ট মানের নিচে পেট্রল কিনবে না বলে জানিয়ে দিলে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে আরপিজিসিএলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। অথচ কৈলাসটিলা এলপিজি প্লান্ট থেকে পেট্রল উৎপাদনের ক্ষমতা দৈনিক প্রায় ১ লাখ লিটার। এছাড়া দৈনিক ২০-২৫ হাজার লিটার ডিজেল এবং ১৫-১৭ টন এলপি গ্যাস উৎপাদন করতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পেট্রল, ডিজেল ও এলপি গ্যাস উৎপাদন থেকে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় ছিল ৪০-৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু গত ১৬ মাসের বেশি সময় প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ। এরপর থেকে আরপিজিসিএল প্লান্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আরপিজিসিএলের উৎপাদিত এলপি গ্যাসের ওপর নির্ভর করে স্থাপিত এলপি গ্যাস বটলিং কারখানাটির উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। একই কারণে গোলাপগঞ্জের দাড়িপাতনের কৈলাসটিলা এমএসটিই গ্যাসফিল্ড প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ এনজিএল পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
অপরদিকে এলপি গ্যাস বটলিং কারখানা থেকে স্থানীয়ভাবে এলপি গ্যাস সরবরাহ করা হতো। কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর স্থানীয়রা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। সর্বশেষ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কৈলাসটিলা এলপি গ্যাস প্লান্ট পরিদর্শন করেন বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ এনডিসি। এ সময় প্লান্টের প্রয়োজনীয়তা, স্থানীয় জীবন-জীবিকায় প্লান্টের গুরুত্ব, প্লান্ট বন্ধ হওয়ায় গরিব মানুষের ভোগান্তি এবং খনিজ সম্পদ এনজিএল ধ্বংস হওয়ার বিষয় তুলে ধরে দ্রুত প্লান্ট চালুর ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান স্থানীয় বিশিষ্টজনরা। জবাবে বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, এ প্লান্ট বিপিসির সম্পদ। এটা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। আমরা প্লান্টের জন্য সবকিছু করব। তিনি প্লান্ট সংশ্লিষ্ট সব তথ্য সংগ্রহের জন্য এলপি গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেন।
গোলাপগঞ্জ খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ইউনুছ চৌধুরী বলেন, গোলাপগঞ্জে শিল্প-রখানা বলতে গ্যাসফিল্ড এবং আরপিজিসিএল প্লান্ট ও এলপি গ্যাস বটলিং কারখানা। এগুলো সরিয়ে নেয়া বা বন্ধ করে দেয়ার যেকোনো পরিকল্পনা গোলাপগঞ্জবাসী মানবে না।সিলেট জেলা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইইউ শহীদুল ইসলাম বলেন, লাভজনক সম্পূর্ণ সচল প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে আছে, অথচ কারো কোনো ভ্রূক্ষেপ আছে বলে মনে হয় না। আরপিজিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী খালেদা বেগম বণিক বার্তাকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি চালু করার জন্য এরই মধ্যে একটি প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। উৎপাদিত পেট্রল ‘লাইট কনডেনসেট’ হিসেবে যদি কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেয়া যায় তবে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। প্রতিষ্ঠানটি চালুর ব্যাপারে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করা হচ্ছে।