ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লুটপাটের ঘটনায় সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সাবেক অডিট কমিটির চেয়ারম্যানে এমএ খালেকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। ৭জন শেয়ার হোল্ডারের মামলার প্রেক্ষিতে বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের একক বেঞ্চ মঙ্গলবার এ আদেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী একেএম বদরুদ্দোজা যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে বতর্মানে এমএ খালেক দেশে থাকলেও সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে।
এ ব্যাপারে এমএ খালেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে প্রতিবেদনের বিষয়ে তাকে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানানো হলেও জবাব পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, ফারইস্টের দুর্নীতি নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মামলা দায়ের করেন কোম্পানির ৭জন শেয়ার হোল্ডার। এরা হলেন- মো. ফখরুল ইসলাম, হেলাল মিয়া, কামরুল হাসান, শামসুল হক, মুসলিমা শিরিন, নাজনীন হোসেন এবং আয়শা হুসনে জামান। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন সময়ে কোম্পানিটির পরিচালক ছিলেন।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, দেশের বীমাখাতে বহুল সমালোচিত ঘটনা ফারইষ্ট লাইফের লুটপাট। বোর্ড মিটিংয়ের পর নজরুল ইসলাম ও এমএ খালেক এমনভাবে সারসংক্ষেপ তৈরি করতেন, যার সঙ্গে পর্ষদের সিদ্ধান্তের কোনো মিল ছিল না। এই সারসংক্ষেপ দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ থেকে নিয়েছেন। আর এই ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় সব শেয়ার হোল্ডারদের এর দায় নিতে হচ্ছে। যা একেবারে জালিয়াতি এবং প্রতারণা।
মঙ্গলবার মামলাটি শুনানীর জন্য গ্রহন করেছেন উচ্চ আদালত। এক্ষেত্রে অভিযুক্তরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, ফারইস্ট লাইফের দুর্নীতির বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে বীমাখাতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। গত দশ বছরে ফারইস্ট লাইফে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন(বিএসইসি)সহ বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে।
এক্ষেত্রে মূল লুটপাট হয় ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে। এ সময়ে কোম্পানির লাইফ ফান্ড ও এফডিআর ভেঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বিশাল সম্রাজ্য গড়েছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বহিস্কৃত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম। নিজের ও স্ত্রীর নামে প্রসাদ সমান বাড়ি ও তিনটি ব্যবসা খুলেছেন। দুটি জমি ক্রয় দেখিয়ে সাড়ে ৩শ কোটি টাকা আত্বসাৎ করা হয়েছে। কিন্তু বীমার টাকা না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির হাজার হাজার গ্রাহক নিয়ন্ত্রকসংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
এর সঙ্গে সাবেক অডিট কোম্পানির চেয়ারম্যান এমএ খালেকের সম্পৃক্ততা পেয়েছে এখাতের নিয়ন্ত্রকসংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এছাড়াও লুটপাটের সময় অর্থাৎ ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে আইডিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক যুগান্তরে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলে বীমাখাতে তোলপাড় শুরু হয়। কোম্পানির পর্ষদ ভেঙ্গে দেয় বিএসইসি।