‘পরিস্থিতি যখন নাগালের বাইরে চলে গেছে, হাজার হাজার ছাত্র-জনতা গণভবনের দিকে ঢুকছেন’ গোয়েন্দা সংস্থার এমন তথ্য পাওয়ার পর সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর তড়িঘড়ি আকাশপথে পলায়ন করেন তিনি। বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন হাসিনা। তবে এই সিদ্ধান্তের জন্য প্রথমে মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না তিনি। বরং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি সোমবার সকালেও বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বলপ্রয়োগের কথা বলেছিলেন হাসিনা।
সেদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সেই বৈঠক হয়েছে। তখনো আরও বলপ্রয়োগ করে আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। পদত্যাগ করতেও রাজি হননি।
ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ রোববার রাতে তার একজন উপদেষ্টাসহ কয়েকজন নেতা বোঝানোর চেষ্টা করেন। তারা বলেন, এই পরিস্থিতিতে সেনার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করাই একমাত্র পথ। কিন্তু রোববার রাতে শেখ হাসিনা তা মানতে চাননি। বরং সোমবার সকাল থেকে আরও কড়া কারফিউয়ের ব্যবস্থা করতে বলেন। কিন্তু সোমবার সকাল ৯ টার পর থেকে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। কারফিউ উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামতে থাকেন। ১০টার মধ্যে ঢাকার রাস্তায় জমায়েত বড় হতে শুরু করে।
সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তিন বাহিনীর প্রধান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে গণভবনে ডাকা হয়। শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। বলেন, সামরিক বাহিনীর গাড়িতে উঠে লাল রং দিচ্ছে আন্দোলনকারীরা। কেন বাহিনী আরও কঠোর হচ্ছে না। পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি। কিন্তু মহাপরিদর্শকও জানান, এভাবে আর কঠোর অবস্থান নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে।
এরপরেই হাসিনাকে তারা বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হাসিনা তখনও তা মানতে চাইছিলেন না। এরপর অন্য একটি ঘরে রেহানার সঙ্গে কথা বলেন কর্মকর্তারা। তার কাছে অনুরোধ করা হয় হাসিনাকে বোঝানোর জন্য। একসময় ফোনে হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গেও কথা বলেন কর্মকর্তারা। এরপর ছেলের সঙ্গে কথা হয় হাসিনার। তারপর তিনি পদত্যাগ করতে রাজি হন। জাতির উদ্দেশ্যে একটি ভাষণ রেকর্ড করতে চান তিনি।
এই সময়েই গোয়েন্দাদের কাছ থেকে খবর আসে যে বিপুল পরিমাণ জনতা গণভবনের দিকে আসছেন। ফলে হাসিনাকে ভাষণ রেকর্ড করতে দেওয়া হয়নি। ৪৫ মিনিটের মধ্যে গণভবন ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে বলা হয়।
এর কিছুক্ষণ পর তেজগাঁওয়ের পুরনো বিমানবন্দরের হেলিপ্যাডে যান হাসিনা। সেখানে তাদের কিছু জিনিসপত্র চপারে ওঠানো হয়। এরপর পদত্যাগের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়েন হাসিনা।