বাংলাদেশে সোনার দাম যখন বাড়ছে ঠিক তখন বিশ্ব বাজারে উল্টো চিত্র। সেখানে স্বর্ণের দামে বড় পতন ঘটেছে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলার শক্তি সঞ্চয় করায় এই দাম কমেছে। ভগ্নাংশ ক্রয়কে অতিক্রম করেছে মার্কিন মুদ্রা, যা স্বর্ণের মূল্য কমিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।
কানাডাভিত্তিক বাণিজ্যিক সংবাদমাধ্যম কিটকোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) প্রতি আউন্স স্বর্ণের আগামী আগস্টের সরবরাহ মূল্য হ্রাস পেয়েছে ৮ ডলার ৭০ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ। আউন্সপ্রতি যার দর স্থির ১৯৭২ ডলার ১০ সেন্টে।
এরই মধ্যে স্বর্ণের সরবরাহ মূল্য শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ নিম্নমুখী হয়েছে। বিপরীতে ডলার শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। ডলার সূচক ১০০ অতিক্রম করেছে। বর্তমানে তা ১০০ দশমিক ৫৪৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়েছে ৩০ হাজার টাকা। প্রতি ভরি সোনার দাম এখন লাখ টাকা ছাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৭৭ টাকা, যা তিন বছর আগেও ছিল ৭০ হাজার টাকারও কম। শুক্রবার (২১ জুলাই) থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে স্পট মার্কেটে কিটকো গোল্ড ইনডেক্সের পতন ঘটেছে ৭ ডলার ৫০ সেন্ট। প্রতি আউন্সের দাম নিষ্পত্তি হয়েছে ১৯৬৯ ডলারে।
স্পট মার্কেটে কিটকো গোল্ড ইনডেক্সে শুক্রবার (২১ জুলাই) প্রতি আউন্সের দাম আরও কমতে দেখা যায়। নিউইয়র্ক সময় ১২টা ১৭ মিনিটে আরও ৮ ডলার ৬০ সেন্ট কমে ১৯৬০ ডলার ৪০ সেন্টে নামতে দেখা যায়।
অন্যদিকে, মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে প্রতি ভরি সোনার দাম বেড়েছে ৩০ হাজার টাকা। প্রতি ভরি সোনার দাম এখন লাখ টাকা ছাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৭৭ টাকা, যা তিন বছর আগেও ছিল ৭০ হাজার টাকারও কম। শুক্রবার (২১ জুলাই) থেকে নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে।
বাংলাদেশে সোনার দাম বাড়ানো কিংবা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বা বাজুস। গত মার্চেই প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকা মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছিল। এরপর সাতই জুন আরও প্রায় দু হাজার টাকা বাড়ানো হয়। মাঝে অল্প কিছু কমে আবার বেড়ে সর্বশেষ দাম ছিল ৯৮ হাজার ৪৪৪ টাকা।
শেষ পর্যন্ত আজ শুক্রবার (২১ জুলাই) ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম এক লাখ টাকার মাইলস্টোন অতিক্রম করলো।
ভারতে স্বর্ণের দাম
শুক্রবার (২১ জুলাই) ভারতে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের মূল্য ৫৫ হাজার ৪০০ রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় ৭৩ হাজার ৩৭৯.৮৩ টাকা (১ টাকা সমান ১.৩২ রুপি ধরে)। আর ২৪ ক্যারেটের দাম ৬০ হাজার ৪৪০ রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় ৮০ হাজার ৫৫.৫৪ টাকা (১ টাকা সমান ১.৩২ রুপি ধরে)।
তিন বছর আগে ভারতের একই পরিমাণ ২২ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ৪৮ হাজার ৯০৬ রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় ৫৫ হাজার ৯৯৭.৩৭ টাকা (২০২০ সালে ১ টাকা সমান ১.১৪৫ রুপি ছিল)। আর ২৪ ক্যারেট ছিল ৫২ হাজার ৫১৫ রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় ৬০ হাজার ১২৯.৬৭৫ টাকা (২০২০ সালে ১ টাকা সমান ১.১৪৫ রুপি ছিল)।
প্রতিবেশী দেশ ভারতে গত তিন বছরে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১৫ শতাংশ। যেখানে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। অর্থাৎ ভারতে গত তিন বছরে প্রতি ভরি সোনার দাম প্রায় ৮ হাজার রুপি বাড়লেও বাংলাদেশে বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
শুক্রবার (২১ জুলাই) ভারতে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের মূল্য ৫৫ হাজার ৪০০ রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় ৭৩ হাজার ৩৭৯.৮৩ টাকা (১ টাকা সমান ১.৩২ রুপি ধরে)। আর ২৪ ক্যারেটের দাম ৬০ হাজার ৪৪০ রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় ৮০ হাজার ৫৫.৫৪ টাকা (১ টাকা সমান ১.৩২ রুপি ধরে)।
তিন বছর আগে ভারতের একই পরিমাণ ২২ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ৪৮ হাজার ৯০৬ রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় ৫৫ হাজার ৯৯৭.৩৭ টাকা (২০২০ সালে ১ টাকা সমান ১.১৪৫ রুপি ছিল)। আর ২৪ ক্যারেট ছিল ৫২ হাজার ৫১৫ রুপি, যা বাংলাদেশি টাকায় ৬০ হাজার ১২৯.৬৭৫ টাকা (২০২০ সালে ১ টাকা সমান ১.১৪৫ রুপি ছিল)।
আর তিন বছর আগে অর্থাৎ ২০২০ সালে বাংলাদেশের সোনার ভরি ছিল ৭০ হাজার টাকার সামান্য কম।
দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ার কারণ কী?
আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতি’ আর ‘অকার্যকর আমদানি নীতি’র কারণেই সোনার দাম বেড়েই চলেছে। এই দাম কমার লক্ষণ খুব একটা নেই বলেই মনে করেন তারা।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখলেও এতো দাম হওয়া উচিত নয়। বরং সোনার যথাযথ বাজার মেকানিজম না থাকাকেই দাম অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাওয়ার জন্য দায়ী বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা বিবিসি বাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে সোনার দামের ক্ষেত্রে উল্লম্ফন ঘটেছে কিন্তু এই উল্লম্ফনের কোনো ‘যৌক্তিক ও সুনির্দিষ্ট’ কারণ নেই।
এতোটা দাম বৃদ্ধি স্বাভাবিক নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ ও অন্যান্য কারণে দাম বাড়বে সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে এতোটা বাড়বে কেন? এভাবে আকাশচুম্বী হচ্ছে দাম সোনার কার্যকর বাজার ব্যবস্থা ও রেগুলেশন্স না থাকায়।’
যদিও চলতি বছরের শুরুতেই বিশেষজ্ঞরা আভাস দিয়েছিলেন যে, এ বছর সোনার দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে। বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারিতে বাংলাদেশে প্রতি ভরি সোনার দাম ছিল ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা। জুলাইতে এসে এই দাম এক লাখ অতিক্রম করলো। শিগগিরই এই দাম কমার কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।
এই বিষয়ে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়াল বিবিসি বাংলাকে বলেন, রাশিয়া সোনার উৎপাদনকারী বড় দেশ এবং যুদ্ধের জের ধরে কয়েক বছর ধরে নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার স্বর্ণ বাজারে আসছে না।
বাজুস সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘হঠাৎ করে কাল যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেলে হয়তো দাম কমতে পারে। এছাড়া ডলারের বিনিময় হার, ক্রুড ওয়েলের দাম সহ আনুষঙ্গিক বিষয় বিবেচনা নিলে বলতে হয় দাম কমার আপাতত কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না।’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুদের হার বৃদ্ধি এবং মন্দার আশঙ্কার কারণে বিশ্ব বাজার অনিশ্চিত হয়ে পড়ার কারণে সোনার দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করছিলেন অনেকে। আবার বিশ্বের অনেক দেশে মুদ্রাস্ফীতি ধারণার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গত বছর ব্যাংকগুলো এ খাতে বেশি বিনিয়োগ করছিল। একই সাথে ডলারের দাম ব্যাপক বেড়ে যাওয়াকেও অনেকে সোনার দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী করে থাকেন। আবার অন্য বৈশ্বিক মুদ্রার সাথে ডলারের দাম কমে গেলেও সোনার দাম বেড়েছে।
এ ক্ষেত্রে অনেক বিশ্লেষক অবশ্য কোভিড মহামারির পর আবার যুদ্ধ পরিস্থিতি ও চীনের অর্থনীতির গতি ধীর হওয়াকেও সোনার দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তবে আগামীতে স্বর্ণের দাম বাড়তে পারে। কারণ, চলতি বছর আর মাত্র একবার সুদের হার বাড়াবে ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড)। অর্থাৎ চলতি জুলাইয়ে দাম বাড়িয়ে ২০২৩ সালের বাকি সময়ে বিরত থাকবে তারা।