ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে সিলেটে একের পর এক ঘটছে তুঘলকি কাণ্ড। তৃণমূলকে আঁতাত করে নৌকা যাচ্ছে সরকার বিরোধীদের হাতে। কোথাও জনপ্রিয়তার অভাব বিবেচনায়, কোথাও প্রার্থী সংকট এবং কোনো স্থানে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগদের হাত ছাড়া হচ্ছে নৌকা। এ কারণে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ফাটল ধরাচ্ছে নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাসে।
সিলেটের চতুর্থ ধাপে নির্বাচনে এবার আলোচনায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্বাচনী এলাকা সিলেট-৬ আসনের অন্তর্গত বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ। এবার বিয়ানীবাজারের কুড়ারবাজার ইউনিয়নে সাবেক বিএনপি নেতা হাজী বাহার উদ্দিন নৌকার প্রার্থী হওয়ার পর এবং গোলাপগঞ্জের বুধবারী বাজার ইউনিয়নে মাত্র এক ভোট পাওয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রকিব ফরনকে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। অথচ তার ছেলে লাহিন আলম যুক্তরাজ্য শাখা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ সভাপতি। লন্ডনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘বডিগার্ড’ পরিচয়দানকারী স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা লাহিনের বাবার হাতে তুলে দেওয়া হলো নৌকা! এর ফলে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠেছে এলাকায় অভিযোগ রয়েছে, লাহিন আলম লন্ডনে তারেক রহমানের ঘনিষ্ট এবং বডিগার্ড বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারেক রহমানের সঙ্গে এবং দলীয় সভা-সমাবেশের একাধিক ছবি পোস্ট দেন।
যেগুলো ইতোমধ্যে ভাইরাস করা হয়েছে। এদিকে দেশে অবস্থান করা হেলাল উদ্দিনের আরেক ছেলে ছয়ফুল আলম শাহিন জাতির পিতা ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করেছেন। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে একাধিক ছবি রয়েছে তার। নিজের রাজনৈতিক অবস্থান জানান দিতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে সংসদ নির্বাচনে পরাজিত বিএনপি ফয়সল আহমদ চৌধুরীর সঙ্গেও একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে চলেছেন শাহিন। দুই দিন আগেও চেয়ারম্যান প্রার্থী বিএনপি নেতা হেলাল উদ্দিনের পক্ষে ভোট চেয়ে ফেসবুকে প্রচারণা চালিয়েছেন।
বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত দুই ছেলের এসব কাণ্ডের পরও আব্দুর রকিব ফরন হয়েছেন ইউনিয়ন নির্বাচনে নৌকার মাঝি! এ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে আরেক দফা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ভোটের ব্যবধানে সবার পেছনে থাকা বিএনপি নেতাদের বাবার হাতে নৌকা তুলে দেওয়া নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে এলাকায়। এ নিয়ে ক্ষোভের সংবরন করতে পারছেন না নেতাকর্মীরা। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী বদল করার আহ্বান জানিয়েছেন কেন্দ্রে মনোনয়ন বোর্ডের কাছে।
দলীয় সূত্র জানায়, ১৫ নভেম্বর জেলা নেতাদের উপস্থিতিতে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় তৃণমূলের সর্বোচ্চ ১৪ ভোট পেয়ে প্রথম হন ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হালিমুর রশিদ রাপু, চার ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হন যুবলীগ নেতা শাহিন আহমদ এবং ১ ভোট পেয়ে তৃতীয় হোন আওয়ামীলী নেতা আব্দুর রহান ফরন। মঙ্গলবার কেন্দ্র থেকে ঘোষিত তালিকায় আব্দুর রকিব ফরনের দেখে আওয়ামীলীগ নেতাদের বিস্মত হোন।
আওয়ামীলীগ নেতাদের অনেকে বলেন, আব্দুর রহমান ফরনের এক ছেলে লন্ডনে বিএনপির বড় নেতা, আমাদের দল, নেত্রী এবং জাতির পিতাকে নিয়ে কটূক্তি করে আরেক ছেলে শাহিন আলম বাংলাদেশে বিএনপির বড় নেতা। তাদের ঘরে স্বাধীনতার প্রতীক নৌকা বড়ই বেমানান।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, তৃণমূলের ভোটে যারা এগিয়ে আছেন, তাদের নামসহ অন্যদের নামও কেন্দ্রে পাঠানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড কর্তৃক নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করে দেওয়া হয়।
এর আগে, দ্বিতীয় ধাপে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে সাবেক শিবির নেতা ইকবাল হোসেন ইমাদকে নৌকার প্রার্থী দেওয়া হয়। এ নিয়ে সিলেটজুড়ে তোলপাড় চলে। শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে ইমাদকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার কথা বললেও এবার সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর এলাকা বিয়ানীবাজারের কুড়ারবাজারে সাবেক বিএনপি নেতার বাহার উদ্দিনকে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করা নিয়ে আরেক দফা বিতর্কের পর গোলাগঞ্জের বুধবারীবাজার ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থী নিয়ে সমালোচনা ইউনিয়নের গণ্ডি পেরিয়েছে।