বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েই দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা তার। বাংলাদেশ সময় গতকাল সোমবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে কাতার আমিরের দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশের উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
দলীয় অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, প্রায় ৪ মাস পর দেশে ফিরে এলেও রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন না বিএনপি চেয়ারপারসন। জল্পনা রয়েছে, খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান দলের হাল ধরতে পারেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গেই দেশে ফিরে আসছেন ডা. জুবাইদা।
বিএনপি সূত্র জানায়, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অনেকটা সুস্থ হয়ে দেশে ফিরলেও রাজনীতিতে আর সক্রিয় হচ্ছে না। যদিও এর আগে বিএনপির অনেক নেতাই ধারণা করছিলেন, চেয়ারপারসন দেশে ফিরে তার গুলশানের অফিসে নিয়মিত বসবেন। তবে সেই সম্ভাবনা একেবারে নাকচ করে দিয়েছেন স্বয়ং তারেক রহমান। সম্প্রতি লন্ডন সফরে যাওয়া জামায়াত নেতাদের সামনে তারেক রহমানের এমন ইচ্ছা প্রকাশ পায় বলে জামায়াতের একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়। দলের চেয়ারপারসন হিসেবে খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় না হলেও গুঞ্জন আছে তার সফরসঙ্গী হিসেবে আসা পুত্রবধূ জুবাইদা রহমান যুক্ত হতে পারেন বিএনপির রাজনীতিতে। এজন্য জুবাইদা রহমানের বাবার মালিকানাধীন ধানমন্ডির মাহবুব ভিলায় উঠছেন তিনি। তার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছে সরকারের কাছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়া মঙ্গলবার (আজ) কাতার রয়েল অ্যাম্বুলেন্সের এয়ারক্রাফটে সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় পৌঁছাবেন। আশা করছি, সময়মতোই উনি ঢাকায় পৌঁছাবেন। দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ রেখে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলের পক্ষে থেকে একটা আবেদন, এদিন যেহেতু এসএসসি পরীক্ষা আছে এবং ঢাকা বিমানবন্দর থেকে কাকলী রুটে ম্যাডাম গুলশানের বাসায় যাবেন। সবাইকে অনুরোধ করতে চাই, রাস্তার ওপরে যেন কেউ না দাঁড়ায়। যারা অভ্যর্থনা জানাবেন, তারা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে যেন ম্যাডামকে অভ্যর্থনা জানান। দলের নেতাকর্মীরা জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন- এটা আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। মির্জা ফখরুল বলেন, পুলিশ কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, তারা যেন রাস্তায় কাউকে দাঁড়াতে না দেন। যারা ট্রাফিকের সঙ্গে জড়িত আছেন তাদের প্রতি এ আহ্বান থাকবে। মির্জা ফখরুল বলেন, আমি বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাছে আবেদন রাখতে চাই, কেউ যেন রাস্তায় না দাঁড়ান, ট্রাফিক বিঘ্নিত না করেন, পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র যেতে যেন বাধায় না পড়ে, সেই ব্যাপারে সাইকে নজর রাখতে হবে।
এর আগে লন্ডনে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, স্থানীয় সময় বিকেলে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে কাতার আমীরের দেওয়া রাজকীয় বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে রওনা হবেন বিএনপি চেয়ারপারসন। লন্ডন থেকে ঢাকার আসার পথে দোহায় যাত্রাবিরতি আছে। শিডিউল অনুযায়ী লন্ডন থেকে যাত্রা করে দোহা হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন স্থানীয় সময় রাত আড়াইটায়। খালেদা জিয়া এ মুহূর্তে কেমন আছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, তিনি আগের চেয়ে ভালো আছেন। আমরা আশা করছি, যথাসময়েই ম্যাডাম হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে রওনা হবেন। দেশবাসী দোয়া করবেন ম্যাডাম যেন ভালোভাবে দেশে পৌঁছাতে পারেন। বড় ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে ড্রাইভ করে খালেদা জিয়াকে নিয়ে হিথ্রো বিমানবন্দরে আসবেন বলেও জানান ডা. জাহিদ।
এদিকে দলীয় চেয়ারপারসন ও ডা. জুবাইদা রহমানকে বরণ এবং অভ্যর্থনা জানাতে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিএনপি। অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ১১টি স্পটে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির মিডিয়া সেল ও কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ টিমের সদস্য অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, চার মাস লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা শেষে এবং দীর্ঘ ১৭ বছর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান দেশে ফিরবেন এটি অত্যন্ত ভালো লাগা এবং খুশির খবর। তারা তাদের প্রিয় নেত্রী এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের সহধর্মিণীকে অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত দলীয় নির্দেশনা নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তুত গুলশানের বাসা ফিরোজা : খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে গুলশানের ৮০নং সড়কের তার বাসভবন ‘ফিরোজা’র সামনে পাহারা দিচ্ছেন নিরাপত্তা বাহিনী ও চেয়ারপারসনের সিকিউরিটি ফোর্সের (সিএসএফ) সদস্যরা। বাসার ভেতরের সব কক্ষগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজও শেষ। সামনের সবুজ আঙিনায় ফুল গাছের টব দিয়ে সাজানো হয়েছে। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ম্যাডামের বাসা কমপ্লিটলি রেডি। বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসা, বাসার আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সাজসজ্জার কোনো কিছুই বাদ নেই। ম্যাডামের স্বজনরা সবকিছু তদারকি করেছেন। এখন আমরা সবাই তার আসার অপেক্ষায় আছি।
সফরসঙ্গী হয়েছেন যারা : জানা গেছে, লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পথে খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হবেন সব মিলিয়ে ১৪ জন। খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকা তার মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী জানান, খালেদা জিয়াসহ বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আরো থাকছেন তার দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান। এছাড়া তার মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাফুফের সভাপতি তাবিথ আউয়াল, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ, খালেদা জিয়ার সহকারী মাসুদুর রহমান, দিলারা মালিক, তার দুই গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম ও রুপা শিকদার। এছাড়া ফিরছেন ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার ও ডা. জাফর ইকবাল।