ভূমধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূল থেকে উদ্ধার হওয়া ৫ শতাধিক বাংলাদেশির মধ্যে ৪০০ জনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল এস এম শামিম-উজ জামান মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, দূতাবাস টিম আটককৃতদের সঙ্গে কথা বলেছে। তার মধ্যে দুইদিনে প্রায় ৪০০ জনের ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তারা বাংলাদেশের নাগরিক। যেহেতু তারা অবৈধভাবে গেছেন। ফলে তাদের কাছে পাসপোর্ট বা অন্য কোনো ডকুমেন্ট নেই। রাষ্ট্রদূত বলেন, এর মধ্যে ২৪৪ জন দেশে ফেরতে রাজি। তাদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে।
আইওএম’র মাধ্যমে (স্পন্সর টিকিটে) তাদের যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফেরানো হবে। ওই দলে আরও প্রায় শতাধিক বাংলাদেশি (ডিটেনশন সেন্টারে) রয়েছেন জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, দু’এক দিনের মধ্যে তাদের সাক্ষাৎকার নেবে দূতাবাস টিম। সেখানেও দেশে ফিরতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি পাওয়া যাবে বলে আশা করেন রাষ্ট্রদূত। এদিকে উদ্ধার এবং আটক সকলেই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে ত্রিপোলিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। ঢাকায় পাঠানো দূতাবাসের ‘লিবিয়ায় উপকূল থেকে ৫০০ জন বাংলাদেশি উদ্ধার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, “উপযুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে মহোদয়ের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, লিবিয়ার জাওয়ারিখ উপকূল থেকে একটি ট্রলারে করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাত্রাকালে দেশটির কোস্টগার্ড ৫০০ (পাঁচশত) বাংলাদেশি নাগরিকসহ ৬০০ (ছয়শত) অভিবাসীকে উদ্ধার করে।
দূতাবাস থেকে তাৎক্ষণিকভাবে লিবিয়ার অভিবাসন অধিদপ্তর এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা যায়, গত ২৩শে এপ্রিল ২০২২ তারিখ লিবিয়ার উপকূল থেকে উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের একটি নৌকা হতে ৫০০ জন বাংলাদেশিসহ ৬০০ (ছয়শত) অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তারা সকলেই শারীরিকভাবে সুস্থ আছে। তাদেরকে বর্তমানে ত্রিপোলি শহরের তারিক মাতার ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে। উদ্ধারকৃত ওই বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা প্রদান এবং স্বেচ্ছায় দেশে ফেরত যেতে আগ্রহীদের প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহায়তায় দেশে প্রেরণের জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই লক্ষ্যে দূতাবাস থেকে লিবিয়ার অভিবাসন অধিদপ্তর, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। লিবিয়ার ডিটেনশন সেন্টার কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে উদ্ধারকৃত বাংলাদেশিদের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রচেষ্টা চলছে। ওদিকে ‘মাইগ্রেন্ট রেসকিউ ওয়াচ’ তাদের সর্বশেষ টুইট বার্তায় জানিয়েছে, ত্রিপোলির পূর্বাঞ্চলীয় মিসরাতা জেলার জাওয়ারিখ উপকূল থেকে আটক ৫৪৯ অভিবাসীদের পরিচয় প্রকাশ করেছে লিবিয়ান কোস্ট সিকিউরিটি।
তারা এ সংক্রান্ত একটি প্রেস রিলিজ ইস্যু করেছে। যাতে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব যাচাই করে লিবিয়ান কোস্ট সিকিউরিটি জানিয়েছে ওই দলে ৫৩২ বাংলাদেশি রয়েছেন। তাছাড়া আটককৃতদের মধ্যে মিশরের ৬, সুদানের ১ এবং সিরিয়ার ৬জন অভিবাসী রয়েছেন। মাইগ্রেন্ট রেসকিউ ওয়াচের রিপোর্ট মতে, এক ঝটিকা অভিযানে ভূমধ্যসাগর উপকূল থেকে তাদের আটক করেছে লিবিয়ান পুলিশ। আটককৃতরা অবৈধ পথে ইউরোপে পাড়ি দেয়ার প্রস্তুতিতে ছিলেন। উল্লেখ্য, একদিনে এক অভিযানে এত বড় আটকের ঘটনার অসংখ্য ভিডিও রিলিজ করেছে মিসরাতা মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ এবং মাইগ্রেন্ট রেসকিউ ওয়াচ।
তারা মিসরাতা সিকিউরিটি ডিরেক্টরেটের একাধিক বার্তাও প্রচার করেছে। ত্রিপোলিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আগেই জানান, সাগর পাড় থেকে আটক অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি থাকায় তাৎক্ষণিক দু’জন কর্মকর্তাকে ডিটেনশন সেন্টার ফলোআপের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা আইওএম এবং স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন। আটক অভিবাসীদের একটি অংশকে ত্রিপোলি নিয়ে আসা হয়েছে জানিয়ে দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, লিবিয়ান পুলিশ যে তথ্য শেয়ার করেছে তাতে মোট ৫৪১ জন আটকের কথা বলা হয়েছে। যার মধ্যে ৫ শতাধিক বাংলাদেশি রয়েছেন মর্মে প্রাথমিক ধারণা দেয়া হয়।