দেশে করোনা পরিস্থিতি দিনে দিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। ইতিমধ্যে দৈনিক মৃত্যু ও আক্রান্ত রেকর্ড ছাড়িয়েছে। করোনায় সংক্রমিত হয়ে সারাদেশের হাসপাতালগুলোতে যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের অর্ধেকেরই বেশি গ্রামের মানুষ বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
তিনি বলেছেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের অধিকাংশই গ্রামের। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর যখন পরিস্থিতি অনেক খারাপ হচ্ছে তখন তারা হাসপাতালে আসছেন। সোমবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুষ্ঠিত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে এসব কথা বলেন।
মহামারীর বছর গড়ানোর পর করোনাভাইরাসের ভারতে উদ্ভূত ডেল্টা ধরন বাংলাদেশে সংক্রমিত হওয়ার পর গত এপ্রিল মাস থেকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার সীমান্তের বিভিন্ন জেলায় আলাদাভাবে লকডাউন দিয়েছিল। কিন্তু তাতেও বিপদ কাটেনি। ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হতে শুরু করে বিপজ্জনক ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। শহর ছাড়িয়ে ভয়াবহ এই ধরন গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় গ্রামাঞ্চলে প্রচুর মানুষের জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
করোনার এমন পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। তারপরেও থাকছে না করোনার প্রকোপ। প্রতিদিনের করোনা পরিণতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। টানা এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দৈনিক একশোর বেশি মারা যাচ্ছে করোনায়৷ দৈনিক আক্রান্ত সাত থেকে আট হাজারের ঘরেই আটকে আছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কঠোরভাবে বিধিনিষেধ পালন করা গেলে সামনে এর সুফল আসতে পারে। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার তথ্যমতে, বর্তমানে সারাদেশের প্রায় সব জেলার করোনা পরিস্থিতি ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
সোমবার বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। খুরশীদ আলম বলেন, গতকাল রবিবার ৪৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসকরা বলেছেন, হাসপাতালে যেসব রোগী করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে আসছেন তাদের অধিকাংশের বেশি গ্রামের। রোগে আক্রান্ত হওয়ার অনেক পরে যখন পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে পড়ছে তখন তারা হাসপাতালে আসছেন।
খুরশীদ আলম বলেন, এখন বর্ষার মৌসুম হওয়ায় অনেকেই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলেও সাধারণ সর্দি–জ্বর বা কাশিতে আক্রান্ত বলে ধরে নিচ্ছেন। পরীক্ষা করাচ্ছেন না বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন না। স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক আরও বলেন, মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের গ্রামে গ্রামে মাইকিং করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
এ সময় করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণকারীদের বয়সসীমা কমিয়ে এনে ৩৫ করার চিন্তাভাবনা চলছে বলেও জানান স্বাস্থ্যর ডিজি। খুরশীদ আলম বলেন, ‘টিকা গ্রহণকারীদের বয়সসীমা এখন ৪০ বছর। আমরা এই বয়সসীমা পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার চিন্তা করেছি। বয়সসীমা ৩৫ বছর করার প্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হয়েছে। বয়সসীমা কমানো হলে বেশি মানুষ টিকার আওতায় আসবে।’