দেশে গত ১৫ বছরে বৈষম্য বেড়েছে বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, বৈষম্য শুধু সম্পদের বৈষম্য না, শুধু অর্থের বৈষম্য না, এখানে ভোগ বৈষম্য বেড়েছে।
বুধবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীতে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতার লক্ষ্যে নাগরিক এজেন্ডা: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও সামাজিক সুরক্ষা’ বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন ও সামাজিক সুরক্ষা বিষক পৃথকভাবে প্রতিবেদন করা হয়।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা যখন ২০০৩-২০০৪ সালে বাৎসরিকভাবে যে সমস্ত অর্থনৈতিক মূল্যায়ন করি, সেই অর্থনৈতিক মূল্যায়নকে অতিক্রম করে সরকার যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দেয় সেগুলোর একটা পর্যালোচনা হওয়া বাঞ্ছনীয়। প্রথম আমরা ২০০৩ সালে সরকারের মধ্যমেয়াদে পর্যালোচনা করি। তখন বিএনপি সরকার ক্ষমতায় ছিল। তারপরে ২০০৬ সালে যখন নির্বাচন আসছে তখন আমাদের মনে হয়েছিল জাতীয় নির্বাচনে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় সেগুলোর একটা পর্যালোচনা হওয়া বাঞ্ছনীয়। তখন আমরা রূপকল্প ২০২০-২০২১ আমরা তৈরি করি। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ একই নামে অনেক ক্ষেত্রে একই বিষয়বস্তুগুলোকে নিয়ে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করে।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, পরবর্তী সময়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে যে নির্বাচন হয়েছে পরিস্থিতির কারণে আমরা উৎসাহ বোধ করিনি। সেই সময় আবার একটি প্রাক নির্বাচনী কিছু তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে কিছু পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে। সেটা আমরা করিনি। কিন্তু এবার যখন নির্বাচন আসছে, তার প্রাক্কালে আমরা গত দেড় দশকে যে উন্নয়নের অভিজ্ঞতা তাকে মূল্যায়ন করেছি। সে অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করতে গিয়ে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, জাতীয় মূলধারাকে একধরনের উন্নয়নের আখ্যান যেই ড্যাভলপমেন্ট ন্যারিটি আমরা সর্বত্র শুনি রাজনীতিবিদের কাছ থেকে বা ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে, সেটা কতখানি সত্য, সেটা কতখানি সঠিক, সেটা কতখানি মজবুত, এটা আমাদের বোঝার প্রয়োজন আছে।
দেবপ্রিয় বলেন, আমরা দেশের ঢাকা শহরের বাইরে বিভিন্ন স্থানে যে সমস্ত বিপন্ন জনগোষ্ঠী আছে তাদের সাথে আলোচনার প্রয়োজন বোধ করি। সেই আলোচনার ভিত্তিতে প্রায় ৫০০ জন অংশীজনের সাথে আলোচনা করি। এই আলোচনাগুলোর ভিত্তিতে যেটা হয়েছে পরে এই মানুষগুলোকে আমরা ঢাকায় নিয়ে এসেছিলাম। এটাকে আমরা জনশুনানি নাম দিয়েছিলাম। সেদিন তারা যা বলেছে আমাদের মন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের মানুষগুলো তা শুনতে বাধ্য হয়েছেন।
সিপিডির ফেলো বলেন, প্ল্যাটফর্মের যে কথা সেটা হলো- যে মানুষগুলো প্রান্তিক পর্যায়ে আছে তাদের ঢাকা শহরে দৃশ্যমান করতে হবে। যদি তারা ঢাকা শহরে দৃশ্যমান না হয়, দৃশ্যমানের সাথে সাথে যদি তাদের কণ্ঠস্বর সোচ্চার না হয় এবং সেটাকে ধারাবাহিকভাবে করে দেখার সক্ষমতা যদি তাদের না থাকে, তাহলে নীতি পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষাটা আমাদের আছে সেটা বাস্তবায়ন হবে না। এর একটা বড় কারণ ছিল, যদি ১৫ বছরের উন্নয়নের অভিজ্ঞতা দেখেন, যেটা এখন একেবারেই প্রকাশ্য যে, বাংলাদেশে বৈষম্য বেড়েছে। এই বৈষম্য শুধু সম্পদের বৈষম্য না, শুধু অর্থের বৈষম্য না, এখানে ভোগ বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছ। এই বৈষম্যের সাথে সাথে যেটা হয়েছে কিছু মানুষ যারা ধারাবাহিকভাবে প্রান্তিকে ছিল তারা অব্যাহতভাবেই প্রান্তিকে রয়ে গেছে, যদিও সরকার বিভিন্ন জনকল্যানমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এটার ফলে যেটা হয়েছে এই মানুষগুলো শিক্ষা থেকে, স্বাস্থ্য থেকে এমনকি সরকারের বিভিন্ন সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রেও তারা সেরকমভাবে অগ্রগামী হতে পারেনি। এটিই হলো বাস্তবতা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য শাহীন আনাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ অধ্যাপক, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।