স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) পরিচালিত জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ৮০ শতাংশই ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। দেশে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ এবং রাজধানী ঢাকাতেও ভারতীয় ভেরিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দেশে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আইইডিসিআর নিয়মিত করোনার উচ্চ সংক্রমিত এলাকাসমূহে আক্রান্ত রোগীদের তথ্য অনুসন্ধান, কন্টাক্ট ট্রেসিং এবং সন্দেহজনক রোগীদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করছে।
গত ১৬ মে বাংলাদেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশিতের পর থেকে আইইডিসিআর ও আই দেশি এ পর্যন্ত ৫০টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করেছে। এসব নমুনার মধ্যে ৪০টি (৮০ শতাংশ) নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, আটটি (১৬ শতাংশ) নমুনায় বিটা ভ্যারিয়েন্ট (সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট) শনাক্ত হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা থেকে সংগৃহীত ১৭টি নমুনার ১৫টিতে এবং গোপালগঞ্জ জেলা থেকে সংগৃহীত সাতটি নমুনার সবগুলোতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়। খুলনা শহর থেকে সংগৃহীত তিনটি নমুনার সবগুলোতে এবং ঢাকা শহরের চারটি নমুনার দুইটিতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় সাতজনের নমুনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। এছাড়া ভারত থেকে আগত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত বিভিন্ন জেলার অপর তিন অধিবাসী চুয়াডাঙ্গা ও খুলনায় চিকিৎসাধীন আছেন।
শনাক্ত হওয়া করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট রোগীদের মধ্যে তিনজনের (৭ শতাংশের) বয়স অনূর্ধ্ব ১০ বছর, সাতজনের (১৮ শতাংশের) বয়স ১০-২০ বছর , ১০ জনের ( ২৫ শতাংশের ) বয়স ২১-৩০ বছর, আটজনের (২০ শতাংশের ) বয়স ৩১-৪০ বছর, আটজনের (২০ শতাংশের ) বয়স ৪১-৫০ বছর এবং চারজনের (১০ শতাংশের) বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে। তাদের মধ্যে ২৪ জন (৬০ শতাংশ ) রোগী পুরুষ।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্তদের মধ্যে আটজনের ভারতে ভ্রমণের ইতিহাস আছে এবং ১৮ জনের বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ইতিহাস আছে। অপর ১৪ জন (৩৫ শতাংশ) রোগীর বাংলাদেশে ভ্রমণের অথবা বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার কোনো ইতিহাস পাওয়া যায়নি।
আইইডিসিআর আরও বলছে, বাংলাদেশে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ বিদ্যমান। বাংলাদেশে ভাইরাসটির সংক্রমণের হার দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাসহ অন্যান্য জেলায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংক্রমণের হার রোধ করার লক্ষ্যে দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টসহ অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধে আইইডিসিআর সবাইকে সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি (যেমন- বিনা প্রয়োজনে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকা, জনসমাগম এলাকা এড়িয়ে চলা, অন্যদের থেকে সারির দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করা ও নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে হাত ধৌত করা ইত্যাদি) মেনে চলার জন্য অনুরোধ করেছে।