রোববার (২৫ এপ্রিল) দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোর জেলায় এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৪০ ডিগ্রির ওপরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। দেশের একাধিক স্থানে বয়ে যাচ্ছে তীব্র দাবদাহ।
রোববার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ২০১৪ সালের আগেও অনেকবার ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রা পার হয়েছে। ১৯৯৫ সালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। মূলত বৃষ্টি না হওয়ার কারণেই তাপমাত্রা এত উচ্চতায় উঠেছে। তাছাড়া এ সময়ে সাধারণত তাপমাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মো. আমিরুল আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, খুলনা অঞ্চলে এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আজ যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে তীব্র দাবদাহে জনজীবনে অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না মানুষ। তবে প্রখর তাপে অস্বস্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। এছাড়া তীব্র গরমের মধ্যেও কৃষকরা ধান ঘরে তোলার কাজ করছেন। এই গরমে ধানের কাজ করতে গিয়ে নানান শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ঘোনামাদা এলাকার ডাঙ্গার বাসিন্দা সবুজ বলেন, গ্রীষ্মে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এ বছর তাপমাত্রা পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কৃষকরা দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন।
উপজেলার কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রখর রোদে গরমে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে মাথার ঘিলু টগবগ করছে। তবে গ্রাম এলাকায় মাঝে মধ্যে বাতাস বয়ে যাওয়ায় কিছুটা প্রশান্তি মেলে।
খুলনার দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দা শাহিন জামান পন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রচণ্ড গরম। আজ সকালে বাজার করতে গিয়ে সারা শরীর ঘেমে যায়। খুব ক্লান্ত লাগছে। বাসায় এসেই ফ্যানের নিচে বসেছি।
খুলনার বিআইডিসি সড়কের বাটার মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ রিকশাচালক নাসিম বলেন, খুব সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। সকালের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা কম ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা বেড়েছে। এই গরমে রিকশা চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসছে। মাথা গরমে যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। তবু কী আর করা, সংসার চালাতে হবে। তাই দূরে কোথাও না যেয়ে ধারে কাছের যাত্রী নিচ্ছি। আবার মাঝে মধ্যে কোথাও ছায়া বা গাছতলা পেলে সেখানে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি।
আবহাওয়া অফিস জানায়, দাবদাহ বয়ে যাওয়া এলাকার মধ্যে রয়েছে- রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া এবং খুলনা অঞ্চল। নেত্রকোনা জেলা এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
তাপমাত্রার তথ্যে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার আবহাওয়ার অবস্থায় বলা হয়েছে সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। আর বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বলা হয়েছে, এ সময়ে শুরুতে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ১-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে ৪০ দশমিক ৩, ঈশ্বরদীতে ৩৯ দশমিক ৫, ঢাকায় ৩৯ দশমিক ৫, রাঙ্গামাটিতে ৩৯ দশমিক ৬, মোংলায় ৩৯ দশমিক ৬, খুলনায় ৪০ দশমিক ২, চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৫, কুমারখালীতে ৪০, খেুপপাড়ায় ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসসহ একাধিক এলাকায় ৩৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
এছাড়া অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।