‘ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে ১৫ আগস্টের ঘটনার রায় ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিচারহীনতার কলুষমুক্ত করেছেন। আমাদের আইন দিয়ে আমাদেরকেই যেমন ন্যায়বিচার পাবার সুযোগ করে দিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ যে বিচারহীনতার কালিমালিপ্ত ছিল, তা থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন, এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। যারা সেদিন সাহস করে এ রায় দিয়েছেন তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা রইল।’
‘দেশের মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়, আওয়ামী লীগ সরকার তা নিশ্চিত করেছে’— বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকালে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু স্মারক স্তম্ভ’-এর উদ্বোধন শেষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করেন। এর আগে বেলা ১১টার পর ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ নামের এ স্তম্ভের উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিদের বিচার করা যাবে না, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স করা হয়েছিল। যখন কোনো ঘটনা ঘটে তখন পরিবারের পক্ষ থেকে অনেকে আসে আমার কাছে বিচার চাইতে, বিচার করার জন্য, কতবার এসেছে হাইকোর্টে, মনে হয়েছে আমরা কি কোনো দিন বিচার পাব না? ৩৫ বছর লেগেছে বিচার পেতে। সেটাও যখন আমি সরকারে আসতে পেরেছি তারপর। সরকারে এসেই ইনডেমনিটি আইন বাতিল করেছি। সেই আইন বাতিল করতে গিয়েও কত কথা। ধন্যবাদ জানাই সে সময় যারা আমাকে সহযোগিতা করেছিলেন।
‘স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা আমাদের সংবিধান দিয়েছিলেন। সেই সংবিধানে আমাদের মৌলিক অধিকারের কথা যেমন উল্লেখ ছিল, তেমনি ন্যায়বিচারের কথাও উল্লেখ ছিল। সেখানে আইনের শাসনের অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে স্বাধীন করার কথা সেখানে বলা হয়েছে। আমরা ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে চেষ্টা করেছি জাতির পিতার সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে। এ দেশের মানুষ যাতে নিরপেক্ষভাবে বিচার পায়, স্বল্প খরচে বিচার পায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা চাই, জাতির পিতার যে আদর্শ ছিল সেই আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে।’
‘আমাদের সংগ্রামের ইতিহাস, বিজয়ের ইতিহাস কলুষিত করা হয়েছিল। সেই ইতিহাসকে আবার আমরা বিজয়ের জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ যেন ন্যায়বিচার পায়, আওয়ামী লীগ সরকার তা নিশ্চিত করেছে।
স্বাধীনতার পর সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধনের দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্থানে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই স্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে নির্মাণ করা হয়েছে ‘স্মৃতি চিরঞ্জীব’ স্মারকসৌধ।
স্মারকসৌধে ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর সংবিধানে স্বাক্ষররত জাতির পিতার ছবি এবং ১৯৭২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে বক্তৃতার ছবি ম্যুরাল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ৬৯ জন আইনজীবীর নামের তালিকাও এতে রয়েছে। এছাড়া সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং সংবিধানের ৯৪ ও ৯৫ অনুচ্ছেদ সেখানে উদ্ধৃত করা হয়েছে।
স্মারকসৌধ উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুপ্রিম কোর্টে বহুবার এসেছি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্থানে এবারই প্রথম এলাম।
সরকার একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আইন বিশ্ববিদ্যালয় করে দেবে বলেও অনুষ্ঠানে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের রেকর্ড রুম ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সরকারপ্রধান। এ সময় প্রদর্শন করা হয় মুক্তিযুদ্ধকালীন সুপ্রিম কোর্টে জাতির পিতা ও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর তথ্যচিত্র।
অনুষ্ঠানে সরকারের একাধিক মন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সাবেক বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।