বাংলাদেশের তৈরি পোশাকপণ্যের কদর বিশ্বজুড়েই। তবে দেশের পোশাকশিল্পের বড় ক্রেতা ইউরোপ-আমেরিকা। এছাড়া বিশ্বের নতুন নতুন বাজারেও যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশি পোশাকপণ্য। ফলে ক্রমেই বড় হচ্ছে ক্রেতার তালিকা। দেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা আমেরিকার মতো ইউরোপেও বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বেড়েছে।
সম্প্রতি ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাট চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে ইউরোপের পোশাক আমদানির তথ্য প্রকাশ করেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানির প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ছিল। এই সময়ে (জানুয়ারি-জুন) বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের বাজারে পোশাক আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪৫ শতাংশ (৪৪ দশমিক ৬০ শতাংশ) বেড়েছে। যেখানে তাদের বৈশ্বিক আমদানি বেড়েছে ২৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এর মাধ্যমে ৬ মাসে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পোশাক আমদানি ১১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর শীর্ষ পোশাক আমদানির উৎস চীন। আলোচ্য সময়ে চীন থেকে ইউরোপের পোশাক আমদানি ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। চীন থেকে এ সময়ে আমদানি হয় ১২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারের পোশাকপণ্য।
অপরদিকে, তুরস্ক ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় বৃহত্তম পোশাকের উৎস। আলোচ্য সময়ে তুরস্ক থেকে ইউরোপের পোশাক আমদানি ২০ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে তুরস্ক থেকে ১০ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে ইইউ। এ সময়ে ইউরোপের অন্যান্য শীর্ষ পোশাক আমদানির উৎস- যেমন কম্বোডিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং ভারত থেকে আমদানি যথাক্রমে ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, ৪০ দশমিক ১৫ শতাংশ, ৩২ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং ২৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে।
ইইউ বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি নিয়ে কথা হয় তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, মূলত করোনা মহামারি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো এবং ভোক্তাদের কেনাকাটা বৃদ্ধির ফলে ইউরোপের খুচরা বিক্রি স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়েছে। তবে, মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মন্দার কারণে ২০২২ সালের বাকি সময়টিতে প্রবৃদ্ধির এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা কতটা টিকে থাকবে, তা ভাবনার বিষয়।
এছাড়া, অস্বাভাবিক দীর্ঘ গ্রীষ্মের কারণে শীতের পোশাকের চাহিদাও ইউরোপে বর্তমানে তুলনামূলকভাবে কম। বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানি চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য হারে প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছিল। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ থেকে ইউরোপের আমদানি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পারে। তবে পরবর্তীতে অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে খুচরা বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় ক্রেতারা আপাতত সতর্ক অবস্থানে আছেন বলেও জানান মো. মহিউদ্দিন রুবেল।
অন্যদিকে আমেরিকার অফিসিয়াল ডেটা সোর্স ‘অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপেরেল (ওটিইএক্সএ)’ চলতি বছরের জানুয়ারি-জুলাই সময়ের জন্য সর্বশেষ পোশাক আমদানির পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। ওটিইএক্সএ’র মতে, ২০২১ সালের একই সময়ের (জানুয়ারি-জুলাই) তুলনায় বাংলাদেশ থেকে আমেরিকার পোশাক আমদানি ৫৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। আর পুরো বিশ্ব থেকে তাদের আমদানি বেড়েছে ৩৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। উল্লেখিত সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ৫ দশমিক ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে চীন থেকে আমদানি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪০ শতাংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শীর্ষ পোশাক আমদানির উৎস চীন। আলোচিত সময়ে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্র পোশাক আমদানি করেছে ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারের। একই সময়ে ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ৩৫ দশমিক ৩০ বেড়েছে, আমদানি পৌঁছেছে ১০ দশমকি ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। অন্যান্য শীর্ষ দেশ যেমন ইন্দোনেশিয়া, ভারত, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক আমদানি একই সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।