ব্যবসাবান্ধব নয় বাংলাদেশের ট্যাক্স সিস্টেম। ব্যবসায়ীদের জন্য যেটা জুলুম। আইন করেই এটা করা হয়েছে। এটা বিনিয়োগের জন্য বড় বাধা। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। শনিবার (১৪মে) একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘কেমন বাজেট চাই’-এ ব্যবসায়ীদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে।
২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি বা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বিএনপি নেতা ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ড. মঈন খানসহ বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, করোনার কারণে আমাদের উৎপাদন ক্যাপাসিটি কমে গেছে। সঙ্গে ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধ বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। এত দিন সরকার অবকাঠামোগত খাতে বিনিয়োগ করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রেখেছে। এখন প্রাইভেট বিনিয়োগ দরকার। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে কিছুদিন আগে আমেরিকার ৪৩ সদস্যের প্রতিনিধি বাংলাদেশ ঘুরে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, সবাই বলে বেকার বেড়ে গেছে। কিন্তু আমরা যখন দক্ষ শ্রমিক খুঁজি পাই না। বিদেশ থেকে আনতে হচ্ছে। আমাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধি করতে হবে। এনবিআর করনেটের আওতা বৃদ্ধি করতে পারছে না। আসলে কর ব্যবস্থা ব্যবসাবান্ধব করতে হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানি খাত বড় হওয়ার সুযোগ রয়েছে। যে পরিমাণ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, চলতি বছরে পোশাক খাতে তা ৪২ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। কিন্তু আমি বলতে চাই বাংলাদেশের ট্যাক্স সিস্টেম ব্যবসাবান্ধব নয়। ব্যবসায়ীদের জন্য যেটা জুলুম। আইন করেই এটা করা হয়েছে। এটা বিনিয়োগের জন্য বড় বাধা। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার।
তিনি বলেন, পোশাক খাতে রপ্তানির ক্ষেত্রে আংশিক সমস্যা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুটি সমস্যা রয়েছে তাহলো— গ্যাস সমস্যা ও সরকারের পলিসি না জানা। কেননা গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। তখন বায়ারদের সময়মতো সরবরাহ দিতে না পারলে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দারিদ্রকে যেন আমরা আরও কমিয়ে আনতে পারি, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়বে। স্বাস্থ্য খাতে আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতে আগামীতে কোনো কিছু এলে মোকাবিলা করতে হবে। আমি চাই গ্রামীণ অর্থনৈতিক মেডিলেক হেলথকেয়ার শক্তিশালী হোক। আউটসোর্সিং করে এ দেশের তরুণরা জানান দিচ্ছে তাদের কর্মদক্ষতা, আমি চাইবে বাজেটে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা থাকুক।
কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, চলতি বছর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সারা বিশ্বের মতো আমাদের চিন্তায় ফেলেছে। কেননা সারা বিশ্বের ৪০ ভাগ খাদ্য ইউক্রেন সরবরাহ করে থাকে। সেখানে যুদ্ধের কারণে গম, ভুট্টা উৎপাদন করা যাচ্ছে না। আগামী ছয় মাস পর দেশের খাদ্য নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। এরই মধ্যে ভোজ্যতেল নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। আগামী ছয় মাস পর বিনিয়োগ ব্যবস্থা কী হবে। আমরা গত ১১ বছর ধরে ভর্তুকি দিয়ে আসছি। তারমধ্যে দেখা গেছে, এ বছর বাজেটে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকের ট্যাক্স রেট অনেক বেশি। এমনকি অনাদায়ী ঋণেও আমাদের সেই একই ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। অনাদায়ী ঋণ আদায় হয়ে গেলে আমরা ট্যাক্স দেব। কিন্তু এখানে লাভ পাচ্ছি না, তাও ট্যাক্স দিতে হচ্ছে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, আমাদের কর্পোরেট ট্যাক্সে যে লিস্টেড আর নন লিস্টেডের ফারাক আছে সেটা খুব কম, সাড়ে ৭ শতাংশ। বাংলাদেশে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি আছে, এই ফারাকটা বাড়িয়ে দিতে পারলে তারা লিস্টেড হতে আগ্রহী হবে। আমার প্রস্তাব ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা।
এমএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান বলেন, দেশের ৮৫ শতাংশেরও বেশি কর্মসংস্থান এসএমই খাতের। এই এসএমই খাতে স্বল্প সুদের ঋণ দেওয়ার সুযোগ রাখা উচিত।