দেশের টাকা লুট করে বিদেশের পাচার করে আওয়ামী পরিবারের সদস্যরা বিশ্ব ধনীদের খাতায় নাম লিখিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।
বুধবার (২৪ মে) প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী জোবাইদা রহমানের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ১০ দফা দাবির সমর্থনে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যারা ব্যাংক ও মানুষের হক লুণ্ঠন করেছেন, যারা কানাডায় বেগম পাড়া করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দুবাই, মালয়েশিয়ায় বাড়ি করেছেন তারা আওয়ামী পরিবারের সদস্য। আজকে কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নামে যে লাখ লাখ কোটি টাকা লুণ্ঠন হয়েছে, সেই টাকা দিয়ে আওয়ামী পরিবারের লোকেরা বিশ্ব ধনীদের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। এই চুরির বিরুদ্ধে যাতে কেউ মামলা না করতে পারে এজন্য শেখ হাসিনা সংসদে আইন পাস করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা আর নেই।
বরকত উল্লাহ বুলু আরও বলেন, গত তিন-চর দিন ধরে দেশে তাণ্ডব চলছে। আগে বলেছেন তারা (আওয়ামী লীগ) শান্তি মিছিল করবেন। কিন্তু ওবায়দুল কাদের এখন বলছেন প্রতিরোধ করবেন। সেই প্রতিরোধ করে আমাদের (বিএনপি) নেত্রকোণা ও পটুয়াখালীতে সভা করতে দেওয়া হয়নি। নেত্রকোণায় ৩৭ জন নেতকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পটুয়াখালীতে ৪২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজবাড়ীতে আমাদের নেতা জয়নুল আবেদিন ফারুকের গাড়িতে হামলা হয়েছে। অনেক কষ্ট করে তারা সেখানে সভা করেছেন। পুলিশ নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল।
তিনি আরও বলেন, গতকাল ধানমন্ডিতে শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশ নির্মমভাবে আক্রমণ চালিয়েছে। আমাদের ৪২ জন নেতকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। টিয়ার গ্যাস, বুলেট ছুড়ে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। রাজশাহীতে বিএনপি অফিসে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। নেত্রকোণায় বিএনপি অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেছেন, এই সংসদকে আরও পাঁচ বছরের জন্য বর্ধিত করে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করতে। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান সংসদে প্রবেশ করলেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। তারপর সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাস করে এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি আজীবনের জন্য রাষ্ট্রপতি হয়ে গেলেন। দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেন। মানুষের গণতান্ত্রিক বাক স্বাধীনতা, সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা সব হরণ করলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলুণ্ঠিত করে দেশে এক দলীয় বাকশাল কায়েম করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশের ক্ষমতায় এসেছেন। কাউকে হত্যা বা ক্যু করে তিনি ক্ষমতায় আসেননি। জাতির ঐতিহাসিক প্রয়োজনে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। তিনি এসে আবার মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতন অর্থনৈতিক মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তি, বাক স্বাধীনতা, সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর আবার বহুদলীয় গণতন্ত্রণ প্রবর্তন করার পর দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতি করার অনুমোদন দিয়েছিলেন। তিনি সে দিন আওয়ামী লীগকে আবার পুনরুজ্জীবিত করার অনুমোদন দিয়েছিলেন। তাই আজকের এই আওয়ামী লীগ শেখ মুজিব, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর আওয়ামী লীগ নয়, এই আওয়ামী লীগ হচ্ছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অনুদানকৃত আওয়ামী লীগ।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজকে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশ দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে রেখেছেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েসি রায় দিয়ে তাকে বিদেশে থাকতে বাধ্য করছেন। আপনার (প্রধানমন্ত্রী) মনে থাকা উচিত, ইরানের আয়েতুল্লা খামেনি প্যারিসে বসেই ইরানের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছিলেন। তিনি যেদিন ইরানের এসেছেন সেই দেশের জনগণ তাকে গ্রহণ করে অভ্যর্থনা দিয়েছে। তারেক রহমানও সাত হাজার মাইল দূরে থেকে দেশের মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করছেন।
জাতীয়তাবাদী নবীন দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি হুমায়ুন আহমেদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সোহেল রানার সঞ্চালনায় অবস্থান কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক, তাঁতী দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, কৃষক দলের সহ-সভাপতি ভিপি ইব্রাহীম, মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সেলিম আহমেদ, সদস্য ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রমুখ।