দেশের কোভিড-১৯ মহামারীর দ্বিতীয় তরঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের এই দুঃসময়ে জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য মানবিক সহায়তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই মারাত্মক ভাইরাস আক্রমণের বিরূপ প্রভাব প্রশমনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের পাশাপাশি মানবিক সহায়তা কার্যক্রম গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ লাখের অধিক পরিবারকে পরিবার প্রতি ২,৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবেন। প্রধানমন্ত্রী নববর্ষের প্রাক্কালে দেয়া জাতির উদ্দেশে ভাষণে দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, তাঁর সরকার জনগণের পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ লক্ষ্যে আগামী ২ মে (রোববার) প্রায় সাড়ে ৩৬ লাখ পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহায়তা বিতরণের দ্বিতীয় পর্ব চালু করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সচিব।
সচিব বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের পরিবারকে আগামী ২মে থেকে ইলেকট্রনিক ট্রান্সফার ফান্ড (ইএফটি)’র মাধ্যমে সরাসরি অর্থ সহায়তা প্রেরণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।’ তিনি বলেন, মারাত্মক করোনাভাইরাস নতুন করে বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে ‘জি টু পি’ (সরকার থেকে ব্যক্তি) পদ্ধতিতে মোবাইল আর্থিক পরিষেবা (এমএফএস) ব্যবহার করে নগদ সহায়তা বিতরণ করা হবে।
এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯১২ দশমিক ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন, যেখানে প্রতিটি পরিবার ২,৫০০ টাকা পাবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে একদল সংবাদকর্মীর সাথে আলাপকালে বলেন, ‘বর্তমান লকডাউন শুরু হওয়ার সাথে সাথে শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী মানবিক সহায়তা বিতরণ শুরু করা হয়েছে। অস্থায়ী কর্মহীন, স্বল্প আয়ের, নিঃস্ব ও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষসহ সারাদেশের বিভিন্ন গোষ্ঠী এই সহায়তা পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর সচিব বলেন, লকডাউনের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ এবং দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি উপার্জনকারীদের অসুবিধা হ্রাস করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সারাদেশে ৫শ ৯০ কোটি টাকা বিতরণ শুরু হয়েছে।
এ ছাড়াও তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আরও ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে চলমান লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্র, দুস্থ, অসচ্ছল ও ভাসমান লোকদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী সমস্ত জেলা প্রশাসকের অনুকূলে ইতোমধ্যে তাঁর ‘ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল’ থেকে ১০ দশমিক ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছেন।
গত বছরের গোড়ার দিকে, যখন কোভিড-১৯ এর প্রথম তরঙ্গ দেশে আঘাত হানে, প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে সাড়ে ৩৬ লাখ দরিদ্র পরিবার এবং দুর্বল গোষ্ঠীগুলোকে পরিবার প্রতি ২,৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করেছিলেন। এছাড়াও, বিভিন্ন সরকারী সংস্থা তাদের সুরক্ষা নেট কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং কিছু ক্ষেত্রে সেগুলি ত্বরান্বিত করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পিএমও সচিব।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, যাতে জনসাধারণকে কোন সমস্যায় পড়তে না হয়।’ কেবল গণমানুষই নয় সাংবাদিক স¤প্রদায়কেও আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব উদ্যোগে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টকে তাদের সহযোগিতার জন্য ১০ কোটি টাকা প্রদান করেছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পিএমও সচিব বলেন, সরকার মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকদের লক্ষ্য করে একটি কল সেন্টার নম্বর-৩৩৩ পরিষেবা চালু করেছে। যারা দ্বিধান্বিত ও বিব্রত, যাঁরা সহায়তা চাইতে পাওে না, এটি মুলত তাঁদের জন্য। ‘কেউ যদি ৩৩৩ নম্বরে কল করে সাহায্য চান, জেলা প্রশাসন তাঁদের পরিচয় গোপন করে সহায়তা দেবে’, তিনি যোগ করেন।
তদুপরি, কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী আরও বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছেন এবং সে কারণেই তিনি আবার ভাইরাস আক্রমণের প্রথম আঘাতের মতো দরিদ্রদের নগদ সহায়তার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তিনি হাওর অঞ্চলে সময়মতো ধান কাটার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ও প্রশাসনের প্রতি নির্দেশনা দেন। তাঁর নির্দেশনায় এবং সময়মতো নজরদারির কারণে হাওর অঞ্চলে ৮০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়ে দেশব্যাপী চলমান লকডাউনে ধান কাটতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করেন।
কর্মকর্তারা বলেন, দেশের অর্থনীতি এবং মানুষের জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি সরকার মানুষের জীবন রক্ষায় কঠোর নজরদারি বজায় রেখেছে। সকলের সহযোগিতা সহ প্রধানমন্ত্রীর কিছু সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে গত বছর মহামারীটি সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছিল। ১৩ এপ্রিল জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় তাঁর সরকার গৃহীত চারটি মূল নীতি তুলে ধরেন।
এগুলি হচ্ছে: সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি, এই ব্যয়ের জন্য ‘কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে’ অগ্রাধিকার দেওয়া, আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ প্রণয়ন, অর্থনৈতিক কর্মকা-কে পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিকদের কাজে নিযুক্ত রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা দক্ষতা ধরে রাখা, দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী, দিনমজুর এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িতদের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে সামাজিক সুরক্ষা নেট কর্মসূচি সম্প্রসারণ এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে অর্থ সরবরাহ বাড়ানো।
সরকার চারটি নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে তার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে এবং প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে কারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন বজায় রাখার এবং কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি ১২৪,০৫৩ কোটি টাকার মোট ২৩ টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
এছাড়াও, কোভিড-১৯ এর প্রথম আঘাতকালীন দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, হকার, রিকশা চালক, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ ধর্মীয় সংস্থার লোক, সাংবাদিক এবং জনগণসহ মোট প্রায় আড়াই কোটি মানুষ প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা উদ্যোগের আওতায় আসে।