ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের ঢাকা সফরকে কালো মেঘ বলে অভিহিত করেছেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। শনিবার (৬ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও কারা হেফাজতে লেখক মুশতাকের মৃত্যুর প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে তিনি এ কথা বলেন। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে। আজকে জয়শঙ্কর এসেছেন, সেই গৎবাঁধা কথা বলছেন, বিনা বিচারে মারা হবে না। কিন্তু ফেলানী হত্যার বিচার কি করেছে? প্রতি সপ্তাহে সীমান্তে মানুষ মারা যাচ্ছে। আজকে কানেক্টিভিটি মানেটা কি? গুজরাটের পণ্য আসামে যেতে পারে না, সেটা আমার উপর দিয়ে সুলভে (স্বল্প খরচ) যাবে। আর আমরা আমাদের বুকের রক্ত দিয়ে স্বাধীন করা দেশটা তাদের জন্য ছেড়ে দেব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনার উজবুক মন্ত্রীদের কথা না শুনে, এই আইনটি বাতিল করেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয়েছিল, তখন চাটুকারেরা কোথায় ছিল? অজানা ঘটনা ঘটলে আপনার ডা. হাছান মাহমুদ বলেন, আর আনিসুল হক বলেন, এদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে চাই, শেষ মুহূর্তে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর উপস্থিতিতে তার মদদে উনি সাহস করে টিকা গ্রহণ করেছেন। যে করোনা টিকা এতদিন নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছিলাম, সেটা উনি এতো দিন নেননি।’ তিনি বলেন, ‘যে তথ্যগুলো উনি প্রকাশ করেননি, সেটা হলো এই টিকা কোন টিকা। এটা কি অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা নাকি ভারতীয় উৎপাদিত টিকা। নাকি জনগণ যে টিকা পেয়েছে সেই টিকা। সেই সঙ্গে আমি উনাকে শোকবার্তায় জানাচ্ছি, দিনের ভোট রাতে নেয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্র নিয়ন্ত্রণের যিনি মাস্টারমাইন্ড এইচ টি ইমাম সাহেব দুদিন আগে ইন্তেকাল করেছেন। যার মৃত্যুতে যত না ক্ষতি হয়েছে রাষ্ট্রের জনগণের, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে প্রধানমন্ত্রী আপনার। আমলাদের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ এত বড় ঘটনা পৃথিবীতে খুব বেশি নেই। অবশ্য এ জন্য আপনি আমলাদের অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছেন। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে এইচ টি ইমাম একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের তার অংশগ্রহণ ছিল।’
ডা. জাফরুল্লাহ আরও বলেন, একটা কার্টুনিস্ট কার্টুন এঁকে ব্যঙ্গ করে দেশের কি ক্ষতি করতে পারে যে তাকে দশ মাস জামিন দেননি। লেখক মুশতাক আহমেদের কথা আপনারা বলছেন, তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে কিন্তু কাউকে যদি আপনারা চিকিৎসা না দেন তাহলে সেটাকে কি স্বাভাবিক মৃত্যু বলা যাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বর্তমানে এক লাখের বেশি ব্যক্তি জেলে আছে। ব্রিটিশ আমলেও এত মানুষ জেলে ছিল না, পাকিস্তান আমলেও না। ঢাকার কাশিমপুর বলেন আর কেরানীগঞ্জ বলেন সেখানকার হাসপাতলে একটা ইসিজি মেশিন নেই, ভেন্টিলিটার নেই। আপনার বাবা তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতেও কারাগারের এই হাসপাতালগুলোর দুরবস্থার কথা বলে গেছেন। আপনি তো আসলে আমাদেরকে ছোট করছেন না। আপনি আপনার বাবাকে ছোট করছেন। আমাদের নেতাকে ছোট করছেন। এই মহানুভব ব্যক্তি তাকে কি জবাব দেবেন? আপনাকে আমি বলছি- আপনি এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে অবশ্যই কবর দিয়ে দেন। এই যে সরকারি অর্থ লুট হয়েছে, একটা মামলা এই পর্যন্ত করেননি। দেশে অনেক আইন আছে, এই আইনের সংশোধন করে কোনো লাভ নেই। এই আইনের সংশোধন প্রতারণা হবে। আর কতদিন প্রতারণা করে চলবেন।’
এনডিপির চেয়ারম্যান কে এম আবু তাহেরের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও এর সভাপতি কে এম রাকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।