হাতে যে তারকার মেলা ছিল, তাতে নিজের দল নিয়ে কাতার বিশ্বকাপে সবচেয়ে স্বস্তিতে থাকতে পারতেন দিদিয়ের দেশম। কিন্তু সেই স্বস্তি কেড়ে নিয়ে ফরাসি কোচকে চরম অস্বস্তির জ্বলন্ত কড়াইয়ে বসিয়ে দিয়েছে ভাগ্যদেবী। কাতারে শিরোপার মিশনে নামা ৩২ দলের ৩২ কোচের মধ্যে বেশি অশান্তিতে আছেন দেশম। ফরাসি কোচের অশান্তির কারণ চোট। নিয়মিত একাদশের ৫ জন ফুটবলার চোটের শিকার হয়ে বিশ্বকাপ দল থেকে ছিটকে পড়েছেন। নামগুলোও বড় বড়। পল পগবা, এনগোলো কন্তে, করিম বেনজেমা, প্রেসনেল কিমপেম্বে, ক্রিস্টোফার এনকুনকু-চোটের থাবায় বিশ্বকাপ স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যাওয়া এই খেলোয়াড়দের প্রত্যেকেই নিজ নিজ পজিশনে প্রতিষ্ঠিত নাম। দলে থাকলে নিশ্চিতভাবেই আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচের প্রথম একাদশে থাকতেন তারা। কিন্তু একাদশে থাকা দূরের কথা, তারা দলেই নেই।
পগবা ও কন্তের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যায় দল ঘোষণার আগেই। কিমপেম্বে, এনকুনকু, বেনজেমারা ছিটকে পড়েছেন দল ঘোষণার পর। কিমপেম্বে, এনকুনকুর পরিবর্তে তবু বিকল্প খেলোয়াড় ডাকার সুযোগ পেয়েছেন দেশম, কিন্তু সদ্যই ব্যালন ডি’অর জয়ী বেনজেমার পরিবর্তে কাউকে দলেই নেননি। ফল, অন্য দেশগুলো ২৬ সদস্যের স্কোয়াড নিয়ে বিশ্বকাপে নামলেও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স নামছে ২৫ সদস্যের জোড়াতালির দল নিয়ে। দল নিয়ে বারবার পরিকল্পনা বদলানোয় বিরক্ত দেশম।
কেন বেনজেমার বিকল্প নিলেন না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে দেশমের বিরক্তি মেশানো উত্তর, ‘আমার সিদ্ধান্ত, তাই।’ শুধু ফ্রান্স দলেরই নয়, পগবা ও কন্তে বর্তমান বিশ্বেরই অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। ফ্রান্স দলের খেলাটা তৈরি করেন তারাই। প্রমাণিত এই দুই সৈনিককে হারিয়েই চাপে পড়ে যান দেশম। পরে দল ঘোষণার পর কিমপেম্বে, এনকুনকুর চোট তার চাপ আরো বাড়িয়ে দেয়। সবশেষ বেনজেমার চোটের খবরে দেশমের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।
এই পাহাড়সম চাপ, হতাশা, অস্বস্তি, অস্থিরতা নিয়েই আজ মাঠে নামতে হচ্ছে তাকে। বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে যে তিন জন খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জয়ের অনন্য কীর্তি গড়েছেন, দেশম তাদের একজন। কাতারে দলকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারলে ৫৪ বছর বয়সি দেশ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন আরো উচ্চতায়। সেই আশার সঙ্গে আছে শিরোপা ধরে রাখার চাপ। দলের এমন করুণ অবস্থার পরও অস্থিরতা দূর করে কোচ দেশমকে শান্তি দিতে পারেন একজন—কিলিয়ান এমবাপ্পে।
২০১৮ বিশ্বকাপে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই বিশ্ববাসীর মন জয় করে নিয়েছিলেন এমবাপ্পে। ফ্রান্সকে দ্বিতীয় বার বিশ্বকাপ জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে নিজে জিতেছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার। সময়ের ব্যবধানে এমবাপ্পে এখন আরো পরিণত। বয়স ও পারফরম্যান্স, দুই দিক থেকেই। চোটজর্জর দলটির সবচেয়ে বড় ভরসাও এখন তিনিই। ক্লাব পিএসজির হয়ে মেসি-নেইমারের সতীর্থ অবিশ্বাস্য ফর্মে রয়েছেন। এরই মধ্যে মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২০ ম্যাচে করেছেন ১৯ গোল। ক্লাবের এই ফর্মটা এমবাপ্পে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে কাতারেও টেনে আনতে পারলে কোচ দেশমের কপালের দুশ্চিন্তার ভাঁজ মুছে যেতে পারে। এমবাপ্পে পারবেন নিজের সেরাটা উপহার দিয়ে কোচ দেশম এবং দেশবাসীর অস্থিরতা দূর করে বিশ্বকাপ নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে?