দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে জব্দকৃত অর্থ কোথায় যায় তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি দুদকের এক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা ও অভিযানে জব্দকৃত অর্থ তার নিজের হেফাজতে রাখার বিষয়টি সামনে এলে এ প্রশ্ন ওঠে। গত রবিবার দুদক সচিব মাহবুব হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, ‘২০২০ সালের ১০ মার্চ কক্সবাজারে একজন সার্ভেয়ারের বাসায় অভিযান চালিয়ে র্যাব ঘুষের ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করে। সেই টাকা তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) হিসেবে শরীফ উদ্দিনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আলামত হিসেবে জব্দ করা টাকা তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে এক বছর চার মাস নিজ হেফাজতে রেখেছেন।’ তবে অভিযোগটি অস্বীকার না করে দুদকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন বলেছেন, ‘জব্দ করা আলামতের টাকা তদন্তকারীর কাছে রাখা যাবে না—এমন বাধ্যবাধকতার কথা আইনে নেই।’ দুদক সচিবের অভিযোগ এবং শরীফ উদ্দিনের জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে এখন যে বিষয়টি বড় হয়ে সামনে পৃষ্ঠা ১৫ কলাম ৪
এ ব্যাপারে দুদক সচিব জানিয়েছেন, জব্দকৃত টাকার বিষয়টি অবিলম্বে আদালতকে অবহিত করারই বিধান রয়েছে। জব্দের পর যদি সরকারি ছুটি থাকে তাহলে ছুটির পরের দিনই তা আদালতে উপস্থাপনের নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশনা অনেক ক্ষেত্রেই মানতে দেখা যায়নি। দুদকের কৌঁসুলী খুরশিদ আলম খান ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, আইনে নির্দেশনা না থাকলেও তদন্তকারী কর্মকর্তারা কমিশনকে অবহিত করেন। এবং কমিশনের অনুমতি নিয়ে অর্থ আদালতে উপস্থাপন করেন। পরে এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি কোষাগারে টাকা জমা রাখা হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন সৃষ্টি হবার পর থেকে কমিশন আইন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা-২০০৭ কয়েকবার সংশোধন হয়েছে। সর্বশেষ দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা-২০০৭ এর (সংশোধনী-২০১৯) ‘‘অপরাধলব্ধ সম্পত্তি অবরুদ্ধকরণ ও ক্রোক, ইত্যাদি” অধ্যায়ের ১৮ বিধি’তে সম্পত্তি অবরুদ্ধকরণ ও ক্রোকাদেশ জারি, অবরুদ্ধকরণ ও ক্রোকাদেশের মেয়াদ, অবরুদ্ধকৃত বা ক্রোককৃত সম্পত্তির জন্য রিসিভার, অবরুদ্ধকৃত বা ক্রোককৃত সম্পত্তি তৃতীয়পক্ষ দাবিদারের অনুকূলে অবমুক্তকরণ, অবরুদ্ধকৃত বা ক্রোককৃত সম্পত্তির চূড়ান্ত নিষ্পত্তির বিধি রয়েছে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের অভিযানে উদ্ধারকৃত অস্থাবর সম্পত্তি বা অর্থ কার কাছে থাকবে বা কোথায় জব্দকৃত টাকা গচ্ছিত রাখা হবে সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোন বিধি নেই। এমনকি কত দিন পর্যন্ত দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ওই অর্থ রাখা যাবে বা ওই অস্থাবর সম্পত্তি কতদিনের মধ্যে কী প্রক্রিয়ায় আদালতে উপস্থাপন করতে হবে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করা নেই।
বিষয়টি স্পষ্ট না থাকায় এ সুযোগে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তা স্বেচ্ছাচারিতা করছে বলে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে দুদকের অভিযানে অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে কী পরিমাণ টাকা বা অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করা হয় তারও রশিদ তদন্ত কর্মকর্তা সঠিক ভাবে দেন না। ফলে জব্দকৃত অর্থের পরিমাণ নিয়ে শুভঙ্করের ফাঁকি থাকতে পারে বলে অভিযোগ আছে। কিন্তু অবৈধ অর্থের মালিকরা ভয়ে এ ব্যাপারে মুখ খোলেন না। এ নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু একটি জটিলতা তৈরি হয়েছে, অবিলম্বে এই আইনের সংশোধন আনা উচিৎ। জব্দকৃত অর্থ কার হেফাজতে থাকবে তার একটা নির্দেশনা থাকতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতেও এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।