দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান ও তদন্তে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের পদায়ন ও বদলির ক্ষমতা সচিবের হাতে তুলে দেওয়ার আদেশের সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি বলছে, এ আদেশের ছ অনুচ্ছেদের ৪ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে রূপ ঢালাওভাবে দুদক আইনের ১৬ ধারার আওতাভুক্ত সব এখতিয়ার বাস্তবায়নের ‘পূর্ণ ক্ষমতা’ সচিবের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে, এর বলে ওই আইনের ৩(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দুদকের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হওয়ার জনপ্রত্যাশার কফিনের শেষ পেরেক ছাড়া আর কিছুই নয়। এ অপপ্রয়াস প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়।
বিবৃতিতে দুদক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের কার্যালয় আদেশের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী দুদকের নির্বাহী ক্ষমতা চেয়ারম্যান ও তার নেতৃত্বে কমিশনারদের হাতে অর্পিত এই প্রতিষ্ঠানের মূল ম্যান্ডেট সংক্রান্ত ওই নির্বাহী ক্ষমতা ঢালাওভাবে সচিবের হাতে অর্পণের এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি কী প্রক্রিয়ায়, কোন যুক্তিতে হলো? কমিশনের ক্ষমতা খর্ব হওয়ার শঙ্কার বিষয়টি কতটা বিবেচিত হয়েছে? সিদ্ধান্তটি কমিশন কর্তৃক সজ্ঞানে গৃহীত, নাকি এতদিন ‘নখদন্তহীন বাঘ’ হিসেবে কথিত এ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাকে বাস্তবে রূপান্তর করার এক অশুভ প্রয়াসের ফসল, এমন প্রশ্ন উঠা খুবই স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, এসব প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর প্রাপ্তি জরুরি, বিশেষ করে কমিশন কেন নিজের হাতে থাকা ক্ষমতাসহ আরও কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ এখতিয়ার সচিবের হাতে নিরঙ্কুশভাবে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো? সেটিরও স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন।
সংস্থাটি মনে করে, দুদক সচিব কর্তৃক জারি করা ডেলিগেশন অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল পাওয়ার (প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ) বিষয়ক কার্যালয় আদেশে অনুসন্ধান ও তদন্তে নিয়োজিত উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন ও বদলির ক্ষমতা দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের হাত থেকে সরিয়ে সচিবের হাতে ঢালাওভাবে ন্যস্ত করা হয়েছে। এতে দুর্নীতি প্রতিকারে কমিশনের ক্ষমতা পদদলিত হওয়ার ভয়ানক শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই কার্যাদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এ সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগের দৃষ্টান্ত অনুসরণের যে ব্যাখা দুদকের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে তা দুদক যে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান নয় তা অনুধাবনে ব্যর্থতার পরিচায়ক।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক এই অশুভ কার্যালয় আদেশ দ্রুত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নই নয়, এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের বলে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের চাকরি স্থায়ী ও নিয়মিতকরণ, চলতি দায়িত্ব দেওয়া, ভাতা ও ছুটি, পেনশন, পিআরএল ও মামলার সাজার পরিপ্রেক্ষিতে পুরস্কার ইত্যাদি সব ক্ষমতা আমলাতন্ত্রের হাতে অর্পিত হওয়ায়, দুদক এখন পুরোপুরিভাবে সাবেক ব্যুরোতে সম্পূর্ণভাবে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে আর কিছুই বাকি থাকলো না।
ড. ইফতেখারুজ্জামান হতাশা ব্যক্ত করে আরও বলেন, এই আদেশের ছ- অনুচ্ছেদের ৪ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে রূপ ঢালাওভাবে দুদক আইনের ১৬ ধারার আওতাভুক্ত সব এখতিয়ার বাস্তবায়নের ‘পূর্ণ ক্ষমতা’ সচিবের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে, তার বলে ওই আইনের ৩(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দুদকের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হওয়ার জনপ্রত্যাশার কফিনের শেষ পেরেক ছাড়া আর কিছুই নয়।