ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের দুই তরুণীকে বেশি বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভনে ভারতে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ওই দুই তরুণী নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। নিখোঁজ দুই তরুণীর একজনের বয়স ১৯ বছর, আরেকজনের ২২। গত শুক্রবার (২৮ মে) তাদের বাবা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
নিখোঁজ দুই তরুণীর বাবা বলেন, পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে তার দুই মেয়ে দুই বছর আগে চাকরি নেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকার একটি বিস্কুট কোম্পানিতে। চাকরির সুবাদে তারা ওই এলাকাতেই বসবাস শুরু করেন। চাকরি করাকালীন মো. সুজন মিয়া (৪৫) ও মো. ইউসুফ মিয়া (২২) নামের দুজনের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। পরিচয় থেকেই ইউসুফের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে নিখোঁজ দুই বোনের বড়বোনের সঙ্গে। প্রেমের সম্পর্কের জেরে নিখোঁজ দুই বোনের বড় কাউকে জানিয়ে ইউসুফকে বিয়ে করেন।
ইউসুফ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের সামাদ মিয়ার ছেলে বলে নিজেকে পরিচয় দেন। তবে, তার এ পরিচয় সঠিক কি-না তা নিশ্চিত করতে পারেননি কিশোরীর বাবা। অপরজন সুজন মিয়ার নাম-ঠিকানাও জানাতে পারেননি তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘গত রোজার ঈদের ১০ থেকে ১২ দিন আগে মেয়েরা আমাকে ফোন করে জানিয়েছিল বাড়িতে আসবে। এর দুই থেকে তিনদিন পর থেকে তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ ছিল।’
আপনার মেয়েরা যে ভারতে আছে, তা কীভাবে জানতে পারলেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘গত মাসের শেষের সপ্তাহে ভারত থেকে পুলিশ আমাদের ফোন করেছিল। আমার একটা মেয়ে নাকি তাদের হেফাজতে আছে। আরেকটি মেয়ে কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য মেয়েটি কোথায় আছে তা আমরা জানি না।’ একথা বলেই কান্না করতে থাকেন এই অভিভাবক। তার দুই মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান তিনি।
ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতে পাচার হওয়ার পর থেকে দুই বোনকে আলাদা রাখা হতো। একদিন কোনোমতে তারা পাচারকারীরদের হাত থেকে পালাতে সক্ষম হন। গত ১৭ মে হাওড়া স্টেশন এলাকায় পুলিশের হাতে আটক হন এক বোন। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কলকাতার শিয়ালদহ এলাকায় ভারতীয় সরকার পরিচালিত সেফ হোম পার্টিসিপেটরি সিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্কের হাতে ন্যস্ত করে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) ভারত থেকে ফোনে পার্টিসিপেটরি সিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর রায় বলেন, ‘বাংলাদেশি একটি তরুণীকে পুলিশ আমাদের হেফাজতে দিয়েছে। তিনি এখন ভালো আছেন। তবে, তার বোন কোথায় আছে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তিনি। আমরাও চেষ্টা করছি মেয়েটিকে যেন তার পরিবারের হাতে বুঝিয়ে দিতে পারি।’
এ বিষয়ে গাজীপুর পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম শফিউল্লাহ বলেন, ‘বিষয়টি প্রথম আপনার কাছে শুনছি। খোঁজখবর নিয়ে বিধি মোতাবেক তাদের উদ্ধার করে দেশে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’