ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যকার সংঘর্ষে দিনভর রণক্ষেত্র ছিল নিউ মার্কেট এলাকা। বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সংঘর্ষে ব্যবসায়ীদের পক্ষে পুলিশ ‘নীরব সমর্থন’ জানিয়েছে বলে সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে।
সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাত থেকে শুরু হওয়া সংঘাত চলে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত। এ সময়ে পুলিশের টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও ব্যবসায়ীদের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। এছাড়া প্রায় ১১ জনের মতো গণমাধ্যমকর্মী আহত হয়েছেন, যার অধিকাংশই ব্যবসায়ীদের হামলায়।
ঘটনার শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কয়েকটি মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয় পুলিশ ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। সেগুলোর একটি হচ্ছে- ‘পণ্যের দামে বনাবনি না হওয়ায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউ মার্কেটের দোকানিদের ওপর হামলা করেছে’। আরেকটি হচ্ছে- ‘খাবারের বিল না দেওয়ায় শিক্ষার্থী ও দোকানদারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা’।
তবে, মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) সারাদিন প্রত্যক্ষদর্শী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলে কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান অন্য কিছু। নিউ মার্কেটের দুটি খাবারের দোকানের কর্মচারীদের মধ্যকার বিবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের মাঝে। কর্মচারীদের একপক্ষকে সমর্থন দিতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার ইফতারের আগে টেবিল পাতাকে কেন্দ্র করে নিউ মার্কেটের ৪ নম্বর গেটের ভেতরে থাকা ‘ওয়েলকাম’ ও ‘ক্যাপিটাল’ নামের দুটি ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ফাস্টফুড দুটির মালিক আপন চাচাত ভাই।
ওই ঘটনার জেরে রাত ১১টার দিকে ওয়েলকামের কর্মচারী বাপ্পী কয়েকজন যুবককে সঙ্গে নিয়ে ক্যাপিটালের কর্মচারী কাউসারের ওপর চড়াও হয়। একপর্যায় কাউসার আরও কয়েকজন যুবককে সঙ্গে নিয়ে বাপ্পী ও তার দলকে মারধর করে মার্কেট থেকে বের করে দেয়।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাপ্পী ঢাকা কলেজের তার পরিচিত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে মার্কেটে প্রবেশ করলে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে তা রূপ নেয় ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে। সহজ অর্থে বলতে গেলে, নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা নিজেদের ঝগড়ায় শিক্ষার্থীদের ডেকে আনে। পরবর্তীতে ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সব গ্রুপ এক হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি মার্কেটের দুই ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারীদের মধ্যে ঝগড়ার সূত্রপাত। একপর্যায়ে একপক্ষ ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ডেকে আনে। সেই ঝগড়া শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষের রূপ নেয়।
সংঘর্ষে রাজনৈতিক ইন্ধনের অভিযোগ
শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে চলা সংঘর্ষের ঘটনায় ‘রাজনৈতিক ইন্ধন’ রয়েছে বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তারা বলছেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা দ্বন্দ্ব রয়েছে। ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ফলে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করছে।
অনেকে আবার অভিযোগ করেন, সংঘর্ষে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ইন্ধন রয়েছে। তারা নিউ মার্কেট এলাকায় নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে ভাড়াটে লোক দিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।
এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘যে খাবারের দোকানে বাকবিতণ্ডা নিয়ে ঢাকা কলেজের দুইজন শিক্ষার্থীকে মারধর ও ছুরিকাঘাত করা হয়, সেই দোকানের মালিক অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন। তিনি নিউ মার্কেট থানা বিএনপির সভাপতি। অন্যদিকে, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার মূল কুশীলব ও উস্কানিদাতা আমির হোসেন। তিনি নিউ মার্কেট থানা যুবদলের আহবায়ক।’
এছাড়া বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে অনেক বছর ধরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। যার বহিঃপ্রকাশ এ সংঘর্ষ।
তবে, রাজনৈতিক ইন্ধনের এমন অভিযোগের সত্যতা রয়েছে কি না, ঢাকা পোস্টের পক্ষে তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। যারা এসব অভিযোগ করেছেন, বিশেষ স্বার্থে প্রতিবেদনে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।