চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে প্রবাসী স্বামীর কাছ থেকে মাসিক খরচ না পেয়ে নিজের দুই বছরের শিশু সন্তানকে অমানুষিক নির্যাতন করেছেন এক মা। নির্যাতন করার সময় মোবাইলফোনে ভিডিও ধারণ করেন তিনি। পরে সেই ভিডিও স্বামীকে পাঠান। যেন টাকা পাঠাতে বাধ্য হয়। কিন্তু সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) ওই ভিডিওটি দেখতে পান শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হুমায়ন রশিদ। পরে ওইদিন রাত ২টায় শিশুটিকে উদ্ধার করেন তিনি। এ সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মান্নান, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবু ইসহাক, চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো, জোবায়েদ কবির বাহাদুর উপস্থিত ছিলেন। পরে শিশুটিকে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বুধবার (৩ আগস্ট) আদালতের মাধ্যমে নির্যাতনকারী মাকে জেলা হাজতে পাঠানো হয়।
শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও মডেল থানা সূত্রে জানা যায়, চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের নূরুল আমিনের মেয়ে পারভীন আক্তারের (২৩) সঙ্গে উপজেলার আশিয়াদারি গ্রামের আ. করিমের ছেলে প্রবাসী মহিনউদ্দিনের তিন বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ফাহাদ (২) নামে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনাবনি না হওয়া স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় আপস মীমাংসা করা হয়। এ সময় বিবাদী পারভীন আক্তার প্রথমে আপস মীমাংসা মেনে নিলেও পরে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে অভিযোগ করেন।
আরও জানা যায়, লিগ্যাড এইড কার্যালয় উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে পারভীন আক্তার ও শিশুর ভরণপোষণ বাবদ মাসে আট হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু প্রবাসী স্বামী মহিনউদ্দিন ঠিকমতো ওই টাকা না দিতেন না। এজন্য সম্প্রতি পারভীন তার শিশু ফাহাদকে বর্বরোচিত নির্যাতন করে এর ভিডিও ধারণ করে স্বামীকে পাঠান।
পরে বাবা মহিনউদ্দিন ওই ভিডিও দেখে শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মনোহরগঞ্জ এলাকার বিভিন্নজনকে অনুরোধ করেন। পরে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়।
শিশুটির মা পারভীন আক্তার জানান, বিয়ের পর থেকে তার স্বামী অন্য মেয়েদের প্রতি আসক্ত। এসবের প্রতিবাদ করায় সে তাদের ভরণপোষণ বন্ধ করে দেয়। স্বামীকে শিক্ষা দিতেই তিনি ছেলেকে নির্যাতন করে ভিডিও পাঠিয়েছেন।
শিশুটির দাদা আ. করিম বলেন, অনেক চেষ্টা করেও ছেলের বউয়ের উগ্র চলাফেরা বন্ধ করা যায়নি। পুলিশ উদ্ধার না করলে আমার নাতি হয়তো মেরেই ফেলতো।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মান্নান জানান, শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। নিকটাত্মীয় বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তার নিরাপত্তা হেফাজত নিশ্চিত করতে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। নির্যাতনকারী মাকে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তীসময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হুমায়ন রশিদ, ভাইরাল ভিডিওয়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা পেলে বাকি কাজ করা হবে।