# মাঠে থাকবে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও এপিবিএন
# প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিজিবিকেও
নানা নাটকীয়তার পর দেশের বৃহৎ দুটি রাজনৈতিক দল ঢাকায় সমাবেশ করতে যাচ্ছে আজ। ইতোমধ্যে তাদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতিও দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই সঙ্গে সমাবেশের সময় ঘনিয়ে আসায় রাজধানীতে জড়ো হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী। ফলে প্রতিপক্ষ দুই দলের সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। এমনকি সংঘাতের আশঙ্কাও জাগছে অনেকের মনে।
তবে বড় দুই দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়েই কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), আনসার ও এপিবিএনের কয়েক হাজার সদস্য আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বে থাকছেন। এছাড়াও যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিজিবিকেও।
ঢাকা মহানগর পুলিশের একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে থাকা বিএনপিকে শুক্রবার বেলা ২টা থেকে নয়াপল্টনের দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ও সহযোগী তিন সংগঠন- যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ একই দিন বেলা ৩টা থেকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গটে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে মাত্র দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বড় দুই রাজনৈতিক দলের সমাবেশ হতে চলেছে শুক্রবার।
সমাবেশের অনুমতির কথা জানিয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আশুরার নিরাপত্তায় পুলিশর ব্যস্ততা রয়েছে, প্রতিদিন তাজিয়া মিছিল হচ্ছে। তারপরও বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে তাদের পছন্দের জায়গায় ২৩টি শর্তে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
দুই দলকেই তাদের চৌহদ্দি নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিএনপির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পুলিশ হাসপাতালর মোড় (ফকিরাপুল) পর্যন্ত এলাকার মধ্য তাদের মিছিল-সমাবেশ এবং মাইক ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। আর আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনকে মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে মুক্তাঙ্গনের মধ্যে তাদের সমাবেশ এবং মাইক ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে।পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বড় দুটি রাজনৈতিক দল বৃহস্পতিবার তাদের কর্মসূচি স্থগিত করায় রাজধানীবাসীর পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার যেসব রাজনৈতিক দলর সভা-সমাবেশ রাজধানীতে ছিল, জনগণকে দুর্ভোগের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এবং ওয়ার্কিং ডে’তে সমাবেশ না করার জন্য আমি ডিএমপির পক্ষ থেকে, নগরবাসীর পক্ষে তাদের ধন্যবাদ জানাই।
অবশ্য, শুক্রবারের সমাবেশকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে বাড়তি নিরাপত্তাও নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যেহেতু বড় দুটি দলের বড় সমাবেশ, তাই কুচক্রী মহলের কেউ এই সমাবেশের সুযোগ নিয়ে যাতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে না পারে, সেই লক্ষ্যে পুলিশ কাজ করছে। এজন্য আমরা পর্যাপ্ত পুলিশ রাখব, আনসার থাকবে, আর্মড পুলিশ (এপিবিএন) থাকবে, র্যাব থাকবে, আমাদের বিজিবি স্ট্যান্ডবাই থাকবে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবো।রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সমাবেশে রাষ্ট্রদ্রাহিতামূলক কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি ডিএমপি থেকে যে সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এর বাইরে মাইক ব্যবহার করা যাবে না। সেই সঙ্গে জনদুর্ভোগ এড়াতে দলগুলোকে নিজেদের ভোলান্টিয়ার রাখতে হবে।
নয়াপল্টন রণসাজে পুলিশ
সমাবেশের অনুমতির পর থেকেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ভিড় করতে শুরু করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বিকেলের পর থেকেই কার্যালয়ের সামনের ভিআইপি সড়কে জড়ো হতে থাকেন তারা। ফলে রাতেই জনারণ্যে রূপ নেয় নয়াপল্টন।
তবে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এবং আশপাশের এলাকায় জলকামান, রায়েট কার ছাড়াও প্রিজন ভ্যানসহ রণসজ্জায় প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশ ঘুরে দেখা যায়, সেখানে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতারা অবস্থান করেছেন। পুলিশ তাদের সরতে বললেও নেতাকর্মীরা আশপাশের গলিতেই অবস্থান করছেন।
তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশের এলাকা ঘিরে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই সঙ্গে সমাবেশকে কেন্দ্র করে পল্টন এলাকায় নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছে পুলিশ। বুধবার (২৬ জুলাই) সকাল থেকেই ফকিরাপুল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত নয়াপল্টন ভিআইপি সড়কে কয়েকশ ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও স্থাপন করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
এদিকে, পল্টন জামে মসজিদর সামনে একটি রায়েট কার ও জল কামান ছাড়াও হোটেল ক্রিস্টাল প্যালেসের সামনেও একটি করে রায়েট কার ও জল কামানসহ প্রিজন ভ্যান প্রস্তুত রাখতে দেখা গেছে। সবমিলিয়ে নয়াপল্টন এলাকা, ফকিরাপুল, নাইটিঙ্গেল মোড়, দৈনিক বাংলা, পুরানা পল্টন ও বিজয় নগর এলাকায়ও ব্যাপক প্রস্তুতিসহ পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়াও সাধারণ কোনো মানুষকে এসব এলাকায় দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি পল্টন ভিআইপি সড়কের আশপাশেও সব ধরনের দোকান বন্ধ দেখা গেছে।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতির বিষয়ে মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান ঢাকা মেইলকে বলেন, এটি একটি ব্যস্ততম সড়ক। এখানে যেন পার্টি অফিসের সামনে নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে সড়কে চলাচল বন্ধ না করে দেয়, সেটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাইছি। জনদুর্ভোগ এড়াতেই এই অবস্থান।
অন্যদিকে, বড় দুই দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নও (র্যাব)। এ ব্যাপারে কথা হলে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবদুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বিশেষ রোবাস্ট পেট্রোল ও চেকপোস্ট মোতায়েন জোরদার করা হয়েছে। আমাদের আওতাধীন এলাকায় রোবাস্ট পেট্রোলসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট মোতায়েন করে গাড়ি তল্লাশি করা হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাব-৪ এর এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
সমাবেশে ২৩ শর্তে যা আছে
সমাবেশ ঘিরে যেন কোনো ধরনের সংঘাত সৃষ্টি না হয় সেজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ২৩টি শর্ত বেঁধে দিয়েছে পুলিশ। এসব শর্তের মধ্যে লাঠিসোঁটা ছাড়াও ব্যানার-ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি কিংবা রড ব্যবহার না করার কথা বলা হয়েছে। শর্তগুলো হলো-
১. এই অনুমতিপত্র স্থান ব্যবহারের অনুমতি নয়, স্থান ব্যবহারের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।
২. স্থান ব্যবহারের অনুমতিপত্রের উল্লেখিত শর্তাবলি যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
৩. অনুমোদিত স্থানেই (পুলিশ হাসপাতাল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত মধ্যবর্তী স্থান) মহাসমাবেশের যাবতীয় কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।৪. কোনো অবস্থাতেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে কোনো ধরনের জনসমাগম করা যাবে না।
৫. নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক (দৃশ্যমান আইডি কার্ডসহ) নিয়োগ করতে হবে।
৬. স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী- নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সমাবেশস্থলের চারদিকে উন্নত রেজ্যুলেশনযুক্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
৭. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মহাসমাবেশস্থলে আগতদের হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে (ভদ্রচিত্তভাবে) চেকিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মহাসমাবেশস্থলে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৯. শব্দদূষণ প্রতিরোধে সীমিত আকারে মাইক ব্যবহার করতে হবে, কোনোক্রমেই অনুমোদিত স্থানের বাইরে মাইক ব্যবহার করা যাবে না।
১০. অনুমোদিত স্থানের বাইরে প্রজেক্টর স্থাপন করা যাবে না।
১১. আজান, নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় সংবেদনশীল সময়ে মাইক ব্যবহার করা যাবে না।১২. ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত আসতে পারে- এমন কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন, বক্তব্য প্রদান বা প্রচার করা যাবে না।
১৩. মহাসমাবেশের কার্যক্রম ছাড়া মঞ্চকে অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
১৪. মহাসমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টা আগে লোকজন সমবেত হওয়ার জন্য আসতে পারবে।
১৫. অনুমোদিত সময়ের মধ্যে (দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা) মহাসমাবেশের সার্বিক কার্যক্রম শেষ করতে হবে।
১৬. কোনো অবস্থাতেই মূল সড়কে যানবাহন চলাচল প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না।
১৭. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়- এমন কার্যকলাপ করা যাবে না।
১৮. রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কার্যকলাপ বা বক্তব্য প্রদান করা যাবে না।১৯. উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান বা প্রচারপত্র বিলি করা যাবে না।
২০. কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা, ব্যানার-ফেস্টুন বহনের আড়ালে লাঠি, রড ব্যবহার করা যাবে না।
২১. আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও কোনো বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।
২২. উল্লেখিত শর্তাবলি পালন না করলে তাৎক্ষণিকভাবে এ অনুমতির আদেশ বাতিল বলে গণ্য হবে।
২৩. জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ছাড়া এই অনুমতি আদেশ বাতিল করার ক্ষমতা সংরক্ষণ করে।