অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের শর্তসাপেক্ষে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনসহ তিন দাবিতে দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। আর এতে খোদ সাত কলেজের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরাই চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
বুধবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সাত কলেজের দর্শন বিভাগের তিনটি সেশনের (২০১৯-২০, ২০১৮-১৯ ও ২০১৭-১৮) শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে রাখেন। হঠাৎ অবরোধের ফলে বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। যানজট একদিকে ধানমন্ডি, অপরদিকে বকশিবাজার পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়।
অবরোধে সৃষ্ট যানজটের কারণে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চরম বিপাকে পড়তে হয় সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীর পরীক্ষার্থীদের। যানজটে ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে যথাসময়ে পৌঁছাতে পারেননি অনেক পরীক্ষার্থী।
ভুক্তভোগীরা জানান, সাত কলেজে বুধবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ২০২০ সালের স্নাতক চতুর্থ বর্ষ, বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ২০১৯ সালের মাস্টার্স শেষ পর্ব ও বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ২০১৭ সালের মাস্টার্স শেষ পর্ব (বিশেষ) পরীক্ষা ছিল।
এসব পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীরা তীব্র জ্যামের কারণে যথাসময়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি। অনেক শিক্ষার্থীই নির্ধারিত সময়ের একঘণ্টা পরে উপস্থিত হন।
ইডেন মহিলা কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থী পারভীন আক্তার বলেন, হেঁটে পান্থপথ থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত আসতে দুপুর ১টা বেজে যায়। আমার পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে। নীলক্ষেত থেকে সেখানে পৌঁছাতে আরও আধা ঘণ্টার মতো লেগে যায়। দুঘণ্টার পরীক্ষায় দেড়ঘণ্টা পর কেন্দ্রে পৌঁছালে তো আর পরীক্ষা দিয়ে লাভ নেই। এজন্য আমি আর পরীক্ষা কেন্দ্রেই যাইনি।
ঢাকা কলেজের মাস্টার্স শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম বলেন, আমার পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল ইডেন মহিলা কলেজে। ধানমন্ডি কলাবাগান থেকে হেঁটে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসতে চরম কষ্ট হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট পর হলে গিয়েছি। দুঘণ্টার পরীক্ষায় লেখা শুরু করতে আধাঘণ্টা চলে গেলে ভালো পরীক্ষা দেওয়া যায়? আমার মতো আড়ও অনেক শিক্ষার্থী আন্দোলনের কারণে আজ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
ঢাকা কলেজের আরেক শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, এয়ারপোর্ট থেকে চার ঘণ্টা আগে রওনা দিয়েও এক ঘণ্টা পরে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হয়েছে। আজকের পরীক্ষা খুবই খারাপ হয়েছে। এরকম অযৌক্তিক আন্দোলনের জন্য আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হলো। কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণের ফলে আমাদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়ল।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, করোনা বিবেচনায় সিজিপিএ শর্ত শিথিল করে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়য় বর্ষের অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের বিশেষ বিবেচনায় পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন দিতে হবে। দর্শন বিভাগের প্রশ্নের মানবন্টন পরিবর্তন করতে হবে। ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৮০ নম্বরের পরীক্ষা নিতে হবে এবং ২০ নম্বর ইনকোর্স এর মাধ্যমে যোগ করতে হবে। গণহারে অকৃতকার্য হওয়ার কারণ নির্ধারণ ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং এর স্থায়ী সমাধান করতে হবে।