হারিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ ২১ বছর পর ভারত থেকে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন দিয়ে বাড়ি ফিরলেন ঠাকুরগাঁও জেলার সদর থানার আখানগর ইউপির অন্তর্গত ঝারগাঁও গ্রামের সহিদুল ইসলাম ও মর্জিনা বেগমের জৈষ্ঠ ছেলে মতিউর।
মতিউরকে ফিরে পেয়ে খুশি তার পরিবার-পরিজন। ১৯৮৭ সালে জন্ম মতিউরের। ২০০২ সালে ১৫ বছর বয়সে হারিয়ে যান তিনি। হারিয়ে যাওয়ার পর ঠাকুরগাঁও সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন মতিউরের বাবা সহিদুল ইসলাম। হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশের আনাচে কানাচে খোঁজ করে সন্ধান পাননি তারা।
ছেলেকে পেতে শুক্রবার সকালে ছুটে এসেছেন মতিউরের বাবা শহিদুল ইসলাম, স্বজন ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান রোমান বাদশা। সকাল থেকে বৃষ্টির মধ্যে বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টে অবস্থান করতে দেখা যাচ্ছে তাদের। সন্তানকে বুকে আগলে নিতে অস্থির হয়ে রয়েছেন বাবা শহিদুল ইসলাম।
জানা যায়, হারিয়ে যাওয়া এ মতিউর রহমানের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার সদর থানার আখানগর ইউপির অন্তর্গত ঝারগাঁও গ্রামে। তিনি ওই গ্রামে সহিদুল ইসলাম ও মর্জিনা বেগমের জৈষ্ঠ ছেলে। ১৯৮৭ সালে জন্ম মতিউরের। ২০০২ সালে ১৫ বছর বয়সে হারিয়ে যান তিনি। হারিয়ে যাওয়ার পর ঠাকুরগাঁও সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন মতিউরের বাবা সহিদুল ইসলাম। হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশের আনাচে কানাচে খোঁজ করে সন্ধান পাননি তারা। এক পর্যায়ে জানা যায় মতিউর ভারতে আছেন।
২০১৯ সালের জুনে ভারতের মহারাষ্ট্রের কারজাত এলাকার এক রাস্তা থেকে মতিউরকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পাওয়া ভারতের শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের কর্মীরা। সংগঠনটি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মানুষ, বিশেষ করে যাঁরা রাস্তায় থাকেন, তাঁদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে কাজ করে। মতিউরকে করার পর তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে সে সম্ভাব্য সিজোফ্রেনিয়ার রোগী হিসেবে শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসার একপর্যায়ে চিকিৎসকেরা জানতে পারেন, তাঁর বাড়ি বাংলাদেশে। ওই সময় মহামারি করোনা শুরু হলে মতিউরের পরিবার সন্ধানের বিষয়টি স্থবির হয়ে পড়ে।
করোনা পরিস্থিতি কমে আসলে আহমেদাবাদের বেসরকারি সংস্থা ‘স্নেহালয়’ বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত হয়। মতিউরকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে নোয়াখালীর গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের রাহা নবকুমার ও তাঁর স্ত্রী তন্দ্রা বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের নীতিশ শর্মা। নীতিশ শর্মা একজন বাঙালি। রাহা নবকুমার ও তন্দ্রা বড়ুয়ার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে একসময় ঠাকুরগাঁওয়ে মতিউরের স্বজনদের খুঁজে পাওয়া যায়। চলতি সালের ঈদের দুইদিন আগে ২৭ জুন মতিউরকে বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে মতিউর রহমান কখন, কীভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন, সে রহস্যের জট এখনও জানা যায়নি।
মতিউরের ছোট সাইফুন্নাহার বলেন, ভাইকে ফিরে পাব এ আনন্দ প্রকাশ করার মতো নয়। ভাইকে ফিরে পেতে ঠাকুরগাও থেকে বাংলাবান্ধায় ছুটে এসেছি।
মতিউরের মা মরজিনা বেগম বলেন, তারা ছেলেকে না পেয়ে মানসিক কষ্টে ছিলেন। দীর্ঘদিন পর খুঁজে পেয়ে তার চোখে-মুখে আনন্দ দেখে তিনিও অনেক খুশি।
মতিউর বলেন, পরিবারকে ফিরে পেয়ে আমি অনেক খুশি। বাবা-মাকে দেখতে পেয়ে খুব খুশি।
মতিউরের বাবা শহিদুল ইসলাম জানান, গত মাসের ২৭ জুন মতিউরের ফেরার কথা ছিল। আমরা তাকে রিসিভ করতে দিনাজপুরের হিলি ও পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে গিয়েছিলাম। কিন্তু কাগজপত্র জটিলতায় তাকে আমাদের কাছে পাঠানো হয়নি। বলা হয়েছিল, ২০ দিনের মাথায় আবার নতুন করে দিন তারিখ করে শুক্রবারে পাঠানো হবে। আজ শুক্রবার পাঠানো হবে জেনেছি। শুক্রবার সকালে আমরা বাংলাবান্ধা ইমিগ্রশনে ছেলেকে নিতে এসেছি। এত দিন পর ছেলেকে ফিরে পাওয়ার মধ্যে যেমন আনন্দ কাজ করছে, তেমনি মনের মধ্যে খুঁজে না পাওয়ার বেদনাও কাজ করছে।
ঠাকুরগাঁও জেলার সদর থানার আখানগর ইউপি চেয়ারম্যান রোমান বাদশা বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর আগে আমার ইউনিয়নের শহিদুল ইসলামের বড় ছেলে হারিয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ একুশ বছর পর সে ভারত থেকে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে আসছে। খবর পেয়ে তার পরিবারকে নিয়ে মতিউরকে নিতে ছুটে এসেছি। সত্যিই আনন্দ লাগছে।