মা ও ছেলেকে অপহরণের পর ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় আটক সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সারোয়ার কবীর, এএসআই হাসিনুর রহমান, কনেস্টবল আহসান উল ফারুক ও চালক হাবিবুর রহমানকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। ২৫ আগস্ট বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় সাদা মাইক্রোবাসে করে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এএসপি সারোয়ার কবীরসহ ৪ জনকে আদালতে নেওয়া হয়। দিনাজপুর আমলি আদালতের-৪-এর বিচারক শিশির কুমার বসু সন্ধ্যায় এই আদেশ দেন।
ভুক্তভোগী লুৎফর রহমানের ভাই খলিলুর রহমান বাদী হয়ে চিরিরবন্দর থানায় অপহরণ মামলা করেছেন। এ মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। জানা গেছে, ২৩ আগস্ট রাত ৯টায় চিরিরবন্দর উপজেলার নান্দেরাই গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে মা জহুরা বেগম (৪৬) ও ছেলে জাহাঙ্গীরকে (২৫) ডিবি পুলিশের পরিচয়ে মাইক্রোবাসযোগে অপহরণ করা হয়। এ সময় মা ও ছেলেকে মারপিটও করে অপহরণকারীরা।
অপহরণকৃতদের বাড়ির লোকজন র্যাব, ডিবি পুলিশসহ বিভিন্ন জায়গায় আটকের বিষয়ে খোঁজ নেয়। কিন্তু কেউ আটকের বিষয়ে কিছু বলতে পারে না। পরে অপহরণকারীরা মোবাইলে জহুরা বেগমের স্বামী লুৎফর রমান ও দেবর রমজানের কাছে প্রথমে ৫০ লাখ এবং পরে ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
গত মঙ্গলবার হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে স্ত্রী ও সন্তানকে উদ্ধারে মুক্তিপণের টাকা দিতে যান স্বামী লুৎফর রহমান ও দেবর রমজান আলী। তাদের সঙ্গে সিভিল পোশাকে পুলিশ রয়েছে টের পেয়ে অপহরণকারীরা সাথে থাকা মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় ১০ মাইল নামক স্থানে পুলিশ তাদের ধরে ফেলে। অভিযানে জেলা পুলিশ ও চিরিরবন্দর থানার পুলিশ অংশ নেয়।
পরবর্তীতে পুলিশ জানতে পারে অপহরণকারীদের মধ্যে রংপুর জোনের সিআইডি পুলিশের এএসপি সারোয়ার কবীর, এএসআই হাসিনুর রহমান, কনেস্টবল আহসান উল ফারুক ও চালক হাবিবুর রয়েছে। বুধবার অপহৃত মা জহুরা বেগম ও ছেলে জাহাঙ্গীরকেও ডিবি অফিসে জিজ্ঞাবাদের জন্য আনা হয়। দিনাজপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে সাংবাদিকের কাছে মুখ খুলেননি।
অভিযুক্তরা কোনোপ্রকার অনুমতি না নিয়ে সেখানে চিরিরবন্দর গেছে বলে জানান রংপুর সিআইডির পুলিশ সুপার আতাউর রহমান। তাদের আটকের বিষয়টি শুনেছি। তারা কেন সেখানে গেছে, কাকে অপহরণ করেছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় খোঁজখবর নিয়ে তদন্ত স্বাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, রংপুর সিআইডির কাছে পলাশ নামে এক ব্যক্তি চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের গাদুশাপাড়ার লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার প্রতারণার অভিযোগ আনেন এক ব্যক্তি। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ আগস্ট রাতে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার সারোয়ার কবীর সোহাগ, এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসান উল ফারুক ও চালক হাবিবুব লুৎফরের বাড়িতে যান। তাকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও ছেলেকে তুলে নিয়ে যান তারা।