দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের গোলাবাড়ী গ্রামে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৩০ পরিবারের ১৪০ জন করোনার প্রতিষেধক হিসেবে গণটিকা কার্যক্রম চললেও নেননি কেউই। গ্রামের বাসিন্দা মনে করেন, করোনার টিকা নিলে মানুষ মারা যায়, পঙ্গু হয়, পায়ে পানি ধরে। যার কারণে তারা কেউ টিকা নেননি। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গুজব ও অপপ্রচারের কারণে তারা এমনটা করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে টিকা না নেওয়ার বিষয়ে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব সুশিলা মার্ডির সঙ্গে। তিনি বলেন, টিকা নিলে মানুষ মারা যাবে সেই ভয়ে আমরা টিকা নিইনি। আমাদের এক আত্মীয় এই কথা বলেছেন। আমার কমোরত এমনিতেই ব্যথা। টিকা নিলে নাকি পাও ফুলে যাবে। আমরা গরিব মানুষ, পাও ফুলে গেলে সংসারের কাজ করবে কে। সেই কারণে আমরা টিকা নিইনি। আরেক আদিবাসী গেদু হেমব্রম বলেন, আমার একটু শ্বাসকষ্ট আছে। কমোরটাও ব্যথা করে। পস্রাবে সমস্যা হয়। মানুষের মুখে শুনেছি টিকা নিলে নাকি রোগ বাড়ে, তাই নিইনি।
তারাই শুধু নন, তাদের মতো ওই গ্রামের বেশ কিছু নারী ও পুরুষের সঙ্গে কথা হয়েছে। গ্রামটিতে বসবাসরতদের বেশিরভাগই অশিক্ষিত। কায়িকশ্রম করেই চলে তাদের সংসার। টিকা নিয়ে সহজ সরল মানুষগুলোর মাঝে বিভিন্ন অপপ্রচার আর গুজব ছড়ানো হয়েছে। ফলে অনেকটা টিকাবিমুখ তারা।এ অবস্থায় ওই গ্রামের বাসিন্দাদের টিকার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয় গোলাবাড়ী আদর্শ মার্সাল যুব উন্নয়ন স্পোটিং ক্লাব নামে একটি সংগঠন। এ লক্ষ্যে ২৭ আগস্ট গ্রামবাসীদের কাছে টিকার গুরুত্ব এবং অপপ্রচারে সাড়া না দিতে আলোচনা সভার আয়োজন করে সংগঠনটি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. সাদিয়া কাসেম সেফা উপস্থিত থেকে তাদের টিকার বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন। সভায় টিকার সুফল সম্পর্কে বিভিন্নভাবে তাদের বোঝানোর পর অবশেষে গ্রামের সবাই টিকা নিতে রাজি হন। পরে আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্রামের প্রায় ১০০ জনের টিকা ফ্রি নিবন্ধন করে দেওয়া হয়।
গোলাবাড়ী আদর্শ মার্সাল যুব উন্নয়নে কোষাধ্যক্ষ আলমগীর মুর্মু বলেন, গ্রামবাসীদের টিকার বিষয়ে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করি। প্রথমে কেউই শোনেননি। তারা বলেন, টিকা নিলে নাকি মানুষ মারা যায়, পা ফুলে যায়, ঘা হয়। বিভিন্ন প্রকার অপপ্রচারের কারণে তারা টিকা নেননি। পরে আমরা গ্রামের মানুষদের একসঙ্গে করার চেষ্টা করি। আমাদের ডাকে সবাই সাড়া দেন। পরে ডাক্তার আপা এসে সবাইকে বুঝিয়েছেন। এতে সবাই টিকা দিতে সম্মত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. সাদিয়া কাসেম সেফা বলেন, আমরা জেনেছি যে তারা বিভিন্ন অপপ্রচারের কারণে টিকা নেননি। আমি এসে তাদের কথাগুলো শুনলাম। শেষে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। গ্রামবাসী এখন টিকা নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে মার্সাল যুব উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের ফ্রি নিবন্ধন করে দিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহাজাহান আলী বলেন, তুলনামূলক ওই গ্রামের বাসিন্দারা অনেকটা অশিক্ষিত। তারা কায়িকশ্রম করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আমার টিকার বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে পর্যাপ্ত প্রচারণা চালিয়েছি। তাদের এ অবস্থার কথা শুনে শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় একটি গির্জায় মতবিনিময়ের আয়োজনে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা গিয়েছিলেন। তিনি তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। এরই মধ্যে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে।