ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর গা ঢাকা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সব মন্ত্রী-এমপি। দেড় দশকেরও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না।
গ্রেফতার আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন সব প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রী। এর মধ্যে নিজেকে অনেকটা লুকিয়ে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করলেও পারেননি সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এবার ধরা খেলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
এর মধ্যে গ্রেফতার এড়াতে সালমান এফ রহমান ‘লুকিংয়ে পরিবর্তন’ আনলেও শেষ পর্যন্ত নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। নৌ-পথে ‘পালানোর সময়’ মঙ্গলবার রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে থাকা সাবেক আইনমন্ত্রীকেও গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সালমান এফ রহমানের কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়। আগে দাড়ি-গোঁফ থাকলেও গতকাল ভাইরাল হওয়া ছবিতে তাকে দাড়ি-গোঁফ শেভ করা অবস্থায় দেখা যায়। সেই সঙ্গে চোখে চশমা, গায়ে গেঞ্জি ও পরনে লুঙ্গি ছিল।
ছবিগুলো দেখার পর নেটিজেনরা ধন্দে পড়েন। ছবির মানুষ সালমান এফ রহমান বলে অনেকে দাবি করলেও আবার কেউ কেউ সন্দেহ পোষণ করেন।
সালমান এফ রহমান ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে একই বিমানে দেশ ছেড়েছিলেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে তথ্য দেওয়া হয়েছিল। সে কারণে অনেকের সন্দেহ হয় গতরাতে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি সালমান এফ রহমান নন। শেষ পর্যন্ত ছবিটি সালমানেরই বলে নিশ্চিত করে কোস্টগার্ড।
কোস্টগার্ড জানায়, নৌপথে পালানোর সময় সদরঘাট এলাকা থেকে সালমান এফ রহমান এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গ্রেফতার করে তাদের একটা টিম। পরে তাদের ডিএমপির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা হন। ২০১৯ সালে তাকে মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা করা হয়। গত দুটি নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং সরকারের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সালমান দেশের ব্যবসায়ী মহলেও ছিলেন প্রতাপশালী একজন।
ওষুধ, বস্ত্র, আমদানি-রফতানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, হোটেল, প্রকৌশল, মিডিয়াসহ নানা খাতে ছড়িয়ে আছে সালমানের বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যবসা। পুঁজিবাজারে তার প্রভাব নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে।