যশোরের ঝিকরগাছা পৌর সদরে ঐতিহ্যবাহী বদরুদ্দিন মুসলিম হাই স্কুল থেকে দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করেছে জমজ দুই বোন তাসনিয়া ফারিন হীরা এবং অবন্তি মেহের মুক্তা। এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অবন্তি মেহের মুক্তা গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে এবং তাসনিয়া ফারিন হীরা জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাদের বাবা মনজুরুল ফয়েজ কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। মা হাফিজা বেগম কাপড় সেলাই করে অর্ধাহারে অনাহারে তিনটি মেয়ে নিয়ে সংসার জীবন পরিচালনা করেন।
হাফিজা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমরা ঝিকরগাছা কৃষ্ণনগর মন্ত্রিপাড়ায় নিজেদের তিন শতক জমির উপরে বসবাস করি। আমাদের সংসারে তিনটি মেয়ে। আমার স্বামী কোনো কাজ করতে পারে না। আমি ঘরে বসে দর্জির কাজ করে আমার মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। কখনও অর্ধাহারে কখনও অনাহারে আমার মেয়েরা থাকে। ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষায় আমার হিরা মুক্তা ভালো রেজাল্ট করেছে। আমি এখন দুশ্চিন্তায় আছি; কোথায় টাকা পাব এবং কী করে তাদের ভালো কলেজে ভর্তি করাবো? নেই কোন সম্পদ; নেই অর্থ কড়ি। স্থানীয় কলেজের স্যারদের হাতে পায়ে ধরে যদি আমার মেয়েদেরকে লেখাপড়া করাতে পারি, তাহলে হয়তো আমি তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারবো। মেয়ে দুটোর ইচ্ছা ভালো কলেজে ভর্তি হয়ে ভালো রেজাল্ট করা, ভালো মানুষ হয়ে দেশের মানুষকে সেবা করা। আমি আমার মেয়েদের জন্য সরকার অথবা সমাজের কোনো দানশীল ব্যক্তি যদি এগিয়ে আসে তাহলে হয়তো ভালো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারব।
গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়া অবন্তি মেহের মুক্তা জানায়, আমার মায়ের স্বপ্ন আমি ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করবো। আর জিপিএ-৫ পাওয়া অপর জমজ বোন তাসনিয়া ফারিন হীরা জানায়, আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন তার।
জমজ দুই বোন আরও জানায়, বিএম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ স্যারসহ সকল স্যারের সহযোগিতা এবং আমার মায়ের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং দোয়া আমাদের এ ভালো রেজাল্ট করতে সাহায্য করেছে।
ঝিকরগাছা বদরুদ্দিন মুসলিম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, তাদের দারিদ্র্য দেখে আমার প্রতিষ্ঠানের সকলেই তাদের সহযোগিতা করেছে। আমি সরকার এবং দেশের দানশীল মানুষের কাছে অনুরোধ করব, জমজ দুই বোন হিরা-মুক্তার লেখাপড়ার জন্য তাদের পাশে থাকতে।