দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে চরম অস্থিতিশীলতা। লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে প্রতিদিন গড়ছে নতুন নতুন রেকর্ড। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ সব ভোগ্যপণ্যের দাম চড়া। মূল্যবৃদ্ধির এ বাজারে পিছিয়ে নেই প্রসাধনীসামগ্রী। জ্বালানি তেল, ডলার ও দিরহামের দাম বাড়ায় আমদানি ও উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এজন্য দেশের প্রসাধানীপণ্যের বাজার চড়া। সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, বডি স্প্রে, পারফিউম, বিভিন্ন ক্রিম ও টয়লেট্রিজ পণ্যের দাম বেড়েছে।
মান ও প্রকারভেদে সাবান-শ্যাম্পুর দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। ৮০ টাকার ডাভ সাবান এখন ১৫০ টাকা। ২০০ গ্রাম ওজনের ইমপেরিয়াল লেদার সাবান (থাইল্যান্ড) ৮৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯৫ টাকা। অর্থাৎ এক লাফে দাম বেড়েছে ১১০ টাকা। মানভেদে ৮০ টাকার গায়ে মাখা সাবান বেড়ে হয়েছে ১৩০-১৫০ টাকা।
বডি স্প্রের দাম বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। ৪০০ মিলির যে নেভিয়া লোশনের দাম ছিল ৬২০ টাকা, তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫০ টাকা। ৩২০ মিলির সানসিল্ক শ্যাম্পুর দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। আগে যেটা বিক্রি হতো ৩৬০ টাকায়, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৪৬০ টাকা।
২০০ মিলির জিলেট শেভিং জেল ২৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩২৫ টাকা। দাম বেড়েছে গুড়া সাবানেরও। এক কেজি ওজনের গুড়া সাবান এখন ১৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৮০ টাকা।
শনিবার (২০ আগস্ট) রাজধানীর কয়েকটি কসমেটিকস শপ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। রাজধানীর গুলশান, মোহাম্মদপুরের জাপান সিটি গার্ডেন, আগোরা, মহাখালী রেলগেট সংলগ্ন এস কে টাওয়ারের পাইকারিসহ খুচরা দোকানে সব প্রসাধনীর দাম বাড়তি।
নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির মধ্যেই কসমেটিকস পণ্যের দাম বাড়ায় আরও বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। গুলশানে কথা হয় ক্রেতা আমিনুল বারি চৌধুরীর সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে ১৭৫ গ্রাম ওজনের গোলাপি রঙের ফা সাবানের দাম ছিল ৮০-১০০ টাকার মধ্যে। এখন এ সাবানের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা। এক সাবানেই বাড়তি গুনতে হচ্ছে ৫০ টাকা। টুথপেস্ট, লোশন, বডি স্প্রে সবকিছুরই দামই বাড়তি। এখন যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে গোসল করাই বাদ দিতে হবে।’
প্রসাধনী আমদানিকারকরা বলছেন, দুবাই, ভারত, জার্মানি, থাইল্যান্ড, চীন, লন্ডন, বুলগেরিয়া, আমেরিকা থেকে প্রসাধনীপণ্য আমদানি করেন তারা। ডলার ও দিরহামে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এখন ৮৫ টাকার ডলার বেড়ে হয়েছে ১১৫ টাকা। দিরহামের দামও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। প্রসাধনীতে ৩৩ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ফলে প্রসাধনীপণ্যের দাম বাড়ছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ডলার ও দিরহামের দাম বাড়ার কারণে আমদানি খরচ বেড়েছে। এজন্য আমদানিকারকরা বেশি দাম নিচ্ছেন। বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করলে তো আর ব্যবসা চলবে না। ফলে তারা খুচরা বাজারেও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।
গুলশান মক্কা ট্রেডার্স কসমেটিকস ফেয়ারের মালিক আরমান হোসাইন রিয়াজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সব প্রসাধনীর দাম বাড়তি। ডলার ও দিরহামের দাম বাড়ায় এমন পরিস্থিতি। ২৩ টাকার দিরহাম বেড়ে হয়েছে ৩৬ টাকা। আমরা প্রসাধনী দুবাই থেকে নিয়ে আসি। অনেক প্রডাক্টের দাম ডলারেও পরিশোধ করতে হয়। ৬৫০ মিলির একটি ডাভ শ্যাম্পুর দাম ছিল ৭০০ টাকা। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৯০০ টাকা। এর কমে বিক্রি করলে লস হবে।’
বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জাহিরুল হক ভূইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়ছেই। প্রসাধনীতে ডিউটি ট্যাক্স ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। এলসি খুলতেও সরকার নিরুৎসাহিত করছে। ফলে ইমপোর্ট কমে গেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। এসব কারণেই প্রসাধনীর দাম বাড়ছে। ডলার ও দিরহামের দাম না কমলে আগামীতে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে।’
এদিকে, আমদানিনির্ভর ছাড়াও দেশে উৎপাদিত প্রসাধনীর দামও বাড়তি। দেশে উৎপাদিত প্রসাধনীর অধিকাংশ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বর্তমানে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়তি। ফলে কারখানায় প্রডাকশন খরচও বাড়তি। কারখানার প্রসাধানী প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠাতে পরিবহন খরচও বেড়েছে। এসব কারণে দেশে উৎপাদিত নানা ধরনের বিদেশি প্রসাধনীর দামও বেড়েছে।
বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য কাজী মঈন উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সব পণ্যের দাম বেড়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় প্রসাধনীর দামও বাড়তি। আমরা বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করি। সেটা দিয়ে প্রসাধনী তৈরি করে থাকি। কাঁচামালের দামও বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় কারখানা পরিচালনা খরচ বেড়েছে। তবে আমাদের কনজুমার (ভোক্তা) মধ্যবিত্ত। তারা যেন সইতে পারেন, সেদিকে নজর রেখে দাম বাড়ানো হচ্ছে।’