শনিবার (২১ জুন) দিবাগত রাতে সিরাজগঞ্জ জেলা পুলিশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানায়।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন। তার নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান এবং জেলা ডিবি পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. একরামুল হোসাইনের নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়। এসআই শারফুল ইসলাম ও এসআই নাজমুল হকসহ টিমের সদস্যরা তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে ডাকাত চক্রের অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালান। এরপর সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—সিরাজগঞ্জের মো. ইউসুফ আলী (২৮) ও মো. আ. মালেক (২৮), টাঙ্গাইল জেলার মো. শাহ আলম (৪০), মো. হাসান মন্ডল (২৫), মো. আমির হোসেন (৪৫), মো. শাহিদ ওরফে সাঈদ (৪১) এবং মো. ইসমাইল ব্যাপারী (৫৩)। তাদের কাছ থেকে একটি ষাড় গরু উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকার করেছেন, তারা একটি সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডাকাতি করেন। ঘটনার দিন রাতে দুটি নৌকায় ১৭-১৮ জন সদস্য নিয়ে তারা চরে যান। সেখানে পৌঁছে ১১-১২ জন সদস্য ছাপড়ায় প্রবেশ করে ঘুমন্ত তারা মিয়া ও তার নাতিকে বেঁধে ফেলেন। পরে তিনটি গরু নিয়ে পালিয়ে যান এবং সেগুলো পুংলী ঘাটে বিক্রি করে মোট ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আদায় করেন। ডাকাত দলের সদস্যরা পরবর্তীতে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে ভাগ করে নেন।
গ্রেপ্তার হওয়া সাতজনই আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশের এই সফল অভিযান এবং দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করায় এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. একরামুল হোসাইন বলেন, ঘটনার পর থেকেই আমরা ডাকাতদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালিয়ে আসছিলাম। অবশেষে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি তারা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ঘটনাটি ঘটে গত ২০ মে গভীর রাতে। ওইদিন বিকেলে খাষকাউলিয়ার তারা মিয়া (৬৫) ও তার নাতি ইব্রাহিম খলিল (১৮) গরু দেখাশোনার উদ্দেশে রাতের খাবারসহ কাউলিয়ার চরের ছাপড়া ঘরে যান। রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে ১০-১২ জনের একটি ডাকাত দল দেশীয় অস্ত্রসহ সেখানে হানা দেয়। তারা দুইজনের হাত, পা, মুখ বেঁধে রেখে ঘরে থাকা দুটি ষাড় ও একটি গাভী নিয়ে পালিয়ে যায়। ডাকাত দল চলে যাওয়ার পর ইব্রাহিম নিজে বাঁধন খুলে পাশের অস্থায়ী বসবাসকারীদের ডেকে আনেন। তারা এসে দেখতে পান তারা মিয়াকে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয়েছে এবং তিনি নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে আছেন। মুখের গামছা সরিয়ে ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়া না পাওয়ায় ধারণা করা হয়, ডাকাতরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে গরু লুট করে পালিয়েছে। এ ঘটনায় পরদিন চৌহালী থানায় একটি হত্যা ও ডাকাতির মামলা দায়ের করা হয়।